
নয়াদিল্লি: ১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধের শেষদিকে পাক ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল তৌকির জিয়া-কে কার্যত সিংহের মুখে একা ঠেলে দিয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তৌকির জিয়া ভারতের তৎকালীন ডিজিএমও নির্মল চন্দ্র ভিজ-এর সামনে সেকথা মেনে নিয়ে বলেন, “আমি আর কী করব? আমাদের মিয়া সাহেব জুতোর বাড়ি খেতে আমাকে একলা-ই পাঠিয়ে দিলেন।” শনিবার কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একথা জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা ও সেদিন নির্মল চন্দ্র ভিজের সঙ্গী তৎকালীন ডেপুটি ডিজিএমও ব্রিগেডিয়ার মোহন ভাণ্ডারী।
তাঁর কথায়, ১৯৯৯-এর জুলাই মাসের শুরুর দিকে। কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানের হার তখন স্পষ্টতই টের পাচ্ছে ইসলামাবাদ। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী ৪ জুলাই ফোন করেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে। ঠিক হয়, দুই দেশের ডিরেক্টর জেনারেল মিলিটারি অপারেশন বা ‘ডিজিএমও’ স্তরে বৈঠকে সংঘর্ষবিরতি নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক হবে। সেইমতো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভারতের ডিজিএমও ও তাঁর ডেপুটি ১১ জুলাই আটারি সীমান্তে পৌঁছন। কিন্তু গিয়ে যা দেখেন তাতে তাজ্জব হতে হয়। পাকিস্তানের ডিজিএমও তৌকির জিয়া একাই এসেছেন বৈঠকে। সাধারণত ডিজিএমও বৈঠকে এমনটা দস্তুর নয়। ডিজিএমও-র সঙ্গে সেনা-র অন্যান্য কর্তারাও আসেন, এটাই নিয়ম। তাই জিয়াকে একা দেখতে পেয়ে ভারতের দুই ডিজিএমও-ই একটু অবাক হন। ব্রিগেডিয়ার ভাণ্ডারী আগেও সিয়াচেন নিয়ে বৈঠকের সময় জিয়াকে দেখেছেন, কথা বলেছেন।
তাই তিনি-ই এগিয়ে গিয়ে সেদিন জিয়ার কাছে জানতে চান, ‘কী হল তৌকির? আজ একা কেন?’ জবাবে সিগারেটে টান দিতে দিতে জিয়া বলেন, ‘কী করব! আমাদের মিয়া সাহেব জুতোর বাড়ি খেতে আমাকে একলাই পাঠিয়ে দিলেন।’ এখানে মিয়া সাহেব বলতে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী শরিফের কথা বলেছিলেন জিয়া, জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার ভাণ্ডারী।
নিয়ম মোতাবেক, ডেলিগেশন ছাড়া দুই দেশের ডিজিএমও বৈঠক করতে পারবেন না। তাই শেষ পর্যন্ত ভারতের তরফেই লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, বৈঠকের জন্য পাক রেঞ্জার্সদের সঙ্গে নিয়ে আসতে। শেষমেশ তিনজন পাক রেঞ্জার্স নিয়মরক্ষায় জেনারেল জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে আসেন। কিন্তু তখনও ভারত নিজেদের তেজ দেখিয়ে অন্তত ১০ মিনিট সীমান্তে দাঁড় করিয়ে রাখে পাক প্রতিনিধি দলকে, স্মৃতিচারণায় জানিয়েছেন ব্রিগেডিয়ার ভাণ্ডারী। তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে ভারতের যাবতীয় দাবি কার্যত মাথা নিচু করে মেনে নেন পাক ডিজিএমও ও রেঞ্জার্সরা। জিয়ার কাছে জেনারেল ভান্ডারী-রা জানতে চান, কিছু বুঝতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না! জবাবে জেনারেল জিয়া জানান, কোনও সমস্যা নেই। এরপর ভারতের উদ্যোগে আয়োজিত লাঞ্চ শেষ করে কার্যত চুপচাপ ফিরে যান পাক প্রতিনিধিরা।