মুম্বই: করোনা সংক্রমণের জেরে কোপ পরেছিল গত বছরের ক্রিসমাস ও বর্ষশেষের উদযাপনে। চলতি বছরে বিগতকয়েক মাস ধরে সংক্রমণের সূচক নিম্নমুখীই হওয়ায়, আগের মতোই উৎসব-আনন্দ পালনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু পথের কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন (Omicron)। ইতিমধ্যেই দেশে নয়া ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫০-রও বেশি মানুষ। সর্বাধিক আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে দিল্লি (Delhi) ও মহারাষ্ট্র (Maharashtra) থেকেই। বছর শেষে সংক্রমণ রুখতে কড়া নিয়ম (COVID Restriction) জারি করল মহারাষ্ট্র সরকার।
শুক্রবার রাজ্য সরকারের তরফে যে নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে বলা হয়েছে, রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা অবধি পাঁচজন বা তার বেশি সংখ্যক মানুষ এক জায়গায় জমায়েত করতে পারবেন না। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হয়েছে এই নতুন নিয়ম। নতুন বছর শুরুর সাতদিন আগে বিয়েবাড়ির ক্ষেত্রেও নয়া নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। বলা হয়েছে, বাড়ির ভিতরে বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১০০ জন এবং বাইরে খোলা জয়গায় বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ২৫০ জন বা ২৫ শতাংশ (যেটি কম হবে) আমন্ত্রণ করা যাবে।
নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, জিম, স্পা, হোটেল, থিয়েটার ও সিনেমা হলগুলি ৫০ শতাংশ দর্শক বা অতিথি নিয়েই পরিচালিত করতে হবে। ক্রীড়া অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ২৫ শতাংশ দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্ষশেষের উদযাপনের কারণে রাজ্যে যাতে আকাশছোঁয়া ওমিক্রন সংক্রমণ না হয়, সেই কারণেই এই নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে।
সম্প্রতিই কেন্দ্রের তরফে সংক্রমণ রোধে নৈশকার্ফু, কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা সম্পর্কে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, তা পর্যালোচনা করে দেখছে মহারাষ্ট্র সরকার। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেলে, আরও কঠোর নির্দেশিকা জারি করা হতে পারে বলেই জানানো হয়েছে।
শুক্রবারই মুম্বইয়ে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮৩ জন, যা গত ৬ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ সংক্রমণ। রাজ্যেও বেড়েছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। শুক্রবার নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৪১০ জন। অন্যদিকে, এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। শুক্রবার নতুন করে ২০ জনের দেহে ওমিক্রন সংক্রমণ পাওয়ায়, রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১০৮-এ।
তবে স্বস্তির খবর, আক্রান্ত ১০৮ জনের মধ্যে ৫৪ জনই ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই উপসর্গহীন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য় অনুযায়ী, গতকালের ওমিক্রন আক্রান্তদের মধ্যে ১১ জন মুম্বই, ৬ জন পুণে, ২ জন সাতারা ও ১ জন আহমেদনগরের বাসিন্দা।
নতুন করে আক্রান্ত ২০ জনের মধ্যে ১৫ জন রোগীরই সম্প্রতি বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। একজন আক্রান্তের দেশের অভ্য়ন্তরেই ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে। বাকি ৪ জন ওমিক্রন আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসায়, তারাও আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্য সরকারের তরফে আরও জানানো হয়েছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১ জন নাবালক রয়েছে এবং ৬ জন রোগীর বয়স ৬০ বছরের বেশি। তবে নতুন আক্রান্তদের সকলেই উপসর্গহীন। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জনই সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত, ৭ জন এখনও টিকা নেননি বলে জানা গিয়েছে।
জেলা ও শহর ভিত্তিক সংক্রমণের হিসাব অনুযায়ী, মুম্বইতেই সর্বাধিক ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। সেখানে এখনও অবধি ৪৬ জনের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। পিম্পরি-চিঞ্চওয়াডে ১৯ জন, পুণে গ্রামীণ অঞ্চলে ১৫ জন ও পুণে শহরে ৭ জন ওমিক্রন আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে।