হায়দরাবাদ : ফাঁকা বাড়িতে একাই থাকতেন বৃদ্ধা মা। ছেলে কর্মসূত্রে লন্ডনে। ৭৩ বছরের বৃদ্ধাকে সাহায্য করার জন্য একজন পরিচারিকার প্রয়োজন ছিল। তাই, মাস কয়েক আগে বছর ৩২-এর এক মহিলাকে কাজে রাখেন ওই বৃদ্ধা। বিপদ আপদ হতে পারে যে কোনও সময়, সেই আশঙ্কাতেই সবসময়ের জন্য বাড়িতে রেখে দেওয়া হয়েছিল ভার্গবী নামে ওই মহিলাকে। নিজের সাত বছরের মেয়েকে নিয়ে হেমবতী নামে ওই বৃদ্ধার ফ্ল্যাটেই থাকতে শুরু করেন পরিচারিকা। সব ঠিকই চলছিল। কিন্তু বৃদ্ধার চোখের সমস্যা আচমকা বাড়তে শুরু করে। হাসপাতালে গেলেও ধরা পড়ে না কিছুই। কয়েক মাসের মধ্যেই পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান তিনি। এরপরই ক্রমশ সামনে আসে আসল ঘটনা। বৃদ্ধার চোখে হারপিক ও ঝন্ডু বাম দিয়েছিলেন ভার্গবী।
হায়দরাবাদের সেকেন্দ্রাবাদের নাচারাম এলাকায় হেমবতীর ফ্ল্যাট। তাঁর ছেলে শশীধর কর্মসূত্রে লন্ডনে থাকেন। গত বছরের অগস্ট মাসে কাজ করতে আসেন ভার্গবী নামে ওই পরিচারিকা। সঙ্গে তাঁর মেয়ে। ওই ফ্ল্যাটেই থাকতে শুরু করেন তাঁরা। বৃদ্ধাকে কাজেকর্মে সাহায্য করতে থাকেন তিনি। ভার্গবীকে কখনও সন্দেহের চোখে দেখেননি বৃদ্ধা। তাঁর মনে কী চলছিল, তা আঁচ করতে পারেননি তিনি।
ঘটনার শুরু গত বছরের অক্টোবর মাসে। একদিন ভার্গবী দেখেন হেমবতী তাঁর চোখ আঙুল দিয়ে ঘষছেন। ভার্গবী জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন, হেমবতীর চোখে অস্বস্তি হচ্ছে, তাই এমনটা করছেন তিনি। ভার্গবী ওই বৃদ্ধাকে বলেন, তিনি একটি ড্রপ দেবেন, যাতে চোখে আরাম হয়। ভার্গবীকে বিশ্বাস করেই তাঁর দেওয়া ড্রপ নিয়মিত চোখে দিতে থাকেন বৃদ্ধা। দিন কয়েক পরই তিনি তাঁর ছেলেকে ফোনে জানান, তাঁর চোখে ইনফেকশন হয়েছে।
চোখে কষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তাঁর মেয়ে উর্বশী তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা পরীক্ষা- নিরিক্ষা করে কিছুই ধরতে পারেননি। বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। কিন্তু চোখের সমস্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকে। কিছুদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান তিনি। বৃদ্ধার ছেলে শশীধর হায়দরাবাদে ফিরে চোখের হাসপাতালে নিয়ে যান মা-কে। সেকানে চিকিৎসরা জানান, চোখে কোনও বিষাক্ত তরল দেওয়া হয়েছে, সেই কারণেই অন্ধ হয়ে গিয়েছেন তিনি। এরপরই সন্দেহ গিয়ে পড়ে ভার্গবীর ওপর।
ভার্গবীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে হেমবতীর পরিবার। পুলিশের সামনে জেরায় ভার্গবী স্বীকার করে নেন, তিনি বাথরুম পরিষ্কার করার হারপিক ও ঝন্ডু বাম জলের সঙ্গে মিশিয়ে ওই আই ড্রপ তৈরি করেছিলেন তিনি। বাড়িতে চুরি করাই ছিল তাঁর আসল উদ্দেশ্য। বৃদ্ধাকে অন্ধ বানিয়ে ওই বাড়িতে নগদ ৪০ হাজার টাকা, একটি সোনার হার ও দুটি সোনার বালা চুরি করার কথাও স্বীকার করেন তিনি। গত বুধবার তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে।