Maharashtra: ‘লাইট জ্বালাবেন না, পুলিশ ডাকুন’ বাংলোয় টাঙানো নোটিস! দরজা ভাঙতেই যা হল…
Maharashtra: মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ ওই যুবকের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে ভাসাইয়ের কামান নামক একটি জায়গার হদিস পান। তারপরেই নাইগাঁও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে।

মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু নিবাসী এক মহিলার কাছ থেকে মুম্বই পুলিশ কমিশনারের অফিসিয়াল ঠিকানায় একটি ইমেল আসে। মহিলার আর্জি তাঁর ভাই কোথায় আছেন তা যেন তদন্ত করে পুলিশ। গত শনিবার শেষবার নিজের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছিল সেই যুবকের। তারপর থেকে যতবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, তাঁদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
এরপরেই নড়েচড়ে বসে মুম্বই পুলিশ। মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ ওই যুবকের মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে ভাসাইয়ের কামান নামক একটি জায়গার হদিস পান। তারপরেই নাইগাঁও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করে।
বুধবার পুলিশ যখন সেই ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় দেখে কামানে শিল্পাঞ্চলে গুদামগুলির মাঝখানে অবস্থিত একটি পুরনো বাংলো। সেই বাংলোয় ঢুকতে গিয়েই চমকে যান তাঁরা।
বাংলোর প্রবেশপথের দরজায় একটি সতর্কীকরণ নোটিস সাঁটা। তাতে লেখা, “ভিতরে কার্বন মনোক্সাইড আছে; আলো জ্বালাবেন না।” এরই সঙ্গে ভেতর প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দেয়।
অবশেষে ফায়ার ব্রিগেডে এসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভিতরে প্রবেশ করে পুলিশ। ওই বাংলো থেকেই ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়। বিষাক্ত গ্যাসের কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, পুলিশ দেখে মৃত ব্যাক্তি একটি ইনহেলশন মাস্ক পরেছিলেন, যা কার্বন মনোক্সাইডের সিলিন্ডারের সঙ্গে যুক্ত করা। মরদেহর পাশে দেওয়ালে লাগানো একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়েছে। সব কিছু দেখে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন ওই ব্যক্তি।
পুলিশ দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মামলা দায়ের করে, তদন্ত শুরু করেছে। কী ভাবে কার্বন মনোক্সাইডের সিলিন্ডার জোগার করলেন ওই ব্যক্তি তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমনকি গ্যাস যাতে বাইরে না যায় তার জন্য এক কাঠমিস্ত্রির সাহায্যে বাড়ির জানালা সিল করে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়, ওই ব্যক্তি এক বছর ধরে ভাসাইয়ের বাংলোয় বসবাস করছিলেন। তদন্তে আরও জানা যায় যে, ওই ব্যক্তি পোওয়াইতে থাকতেন এবং শহরতলির একটি ব্যাঙ্কে কর্মরত ছিলেন।
বাংলোর বেডরুমে একই ভাবে আরও একট নোটিস টাঙানো ছিল। যেখানে লেখা ছিল, “ভিতরে কার্বন মনোক্সাইড আছে। দয়া করে আলো জ্বালাবেন না। পুলিশকে খবর দিন।” ফায়ার ব্রিগেড এসে পিপিই কিট পরে ওই ঘরে প্রবেশ করেন। হাইড্রলিক স্প্রেডার কাটার দিয়ে গ্যাস মুক্ত করা হয় ওই ঘরকে।
অফিসাররা দেখেন মৃত ব্যক্তি একটি মাস্ক পরে রয়েছেন, যা কার্বন মনোক্সাইডের সিলিন্ডারের সঙ্গে লাগানো ছিল। সিলিন্ডারগুলি সাজানো ছিল। নিজের দুই হাতে দুটি সিলিন্ডার বাঁধা ছিল এমনকি হেলমেট পরেছিল ওই যুবক। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে একটি মাস্ক নেবুলাইজরের সাহায্যে যুক্ত ছিল। ওই মাস্কের সাহায্যে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে প্রবেশ করে। মৃত দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, “কারও যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। শোওয়ার ঘরে কীভাবে প্রবেশ করবেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশাবলী লেখা হয়েছিল। কাঠের তক্তা দিয়ে জানলা সিল করে দেওয়া হয়েছিল।” রোহিত বিশ্বকর্মা নামক কাঠমিস্ত্রি জানান, ঘটনার দু’দিন আগে তিনিই ওই বাংলোর জানলা কাঠ মেরে সিল করে এসেছিলেন। পুলিশ তাঁর বয়ান রেকর্ড করেছেন।
নাইগাঁও থানার সহকারী পুলিশ পরিদর্শক বলরাম পালকার জানান, সুইসাইড নোটে ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন গত দেড় বছর ধরে শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। যার কোনও প্রতিকার ছিল না ভালো বাঁচতেও পারছিলেন না তিনি। তাই জীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ি থেকে পাঁচটি গ্যাস সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে।





