
বেঙ্গালুরু: ২০০ টাকা। আজকের দিনে খুব বেশি টাকা না হলেও, ১৯৯০ সালে ২০০ টাকা মানেই অনেক টাকা মনে করা হত। ২০০ টাকার বিনিময়ে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেই ফাঁদে পা দিয়েই খোয়ান পুরো টাকা। কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন ভেঙ্কটেশ। এরপর জল গড়িয়েছে অনেক। ৩৫ বছর পর অবশেষে তিনি পেলেন সুবিচার।
কর্নাটকের উত্তর কন্নড় জেলার পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করল ৩৫ বছর আগে ২০০ টাকার প্রতারণা করার অভিযোগে।
সালটা ১৯৯০। ভেঙ্কটেশ মহাদেব বৈদ্য তখন সবে কলেজে ভর্তি হয়েছেন। সেই সময়ই তাঁর পরিচয় হয় বি কেশবমূর্তি রাও নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি নিজেকে বিরাট ‘প্রভাবশালী‘ বলেই পরিচয় দেন। বলেন, ২০০ টাকা দিলে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেবেন।
ভেঙ্কটেশের কাছে সেই আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। মা-বাবা দিনমজুরের কাজ করতেন। ভেঙ্কটেশ নিজেও টুকটাক কাজ করতেন কলেজে পড়াশোনার খরচ জোগানোর জন্য। সরকারি চাকরির প্রলোভন এড়াতে পারেননি। পরিচিত এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার করেন এবং কেশবমূর্তিকে টাকা দেন। কিন্তু চাকরি পাওয়া তো দূর, বরং টাকা নিয়ে পালিয়ে যান কেশবমূর্তি।
ভেঙ্কটেশ এত টাকা খুইয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। থানায় অভিযোগ করেন। কষ্ট করে পড়াশোনা করে তিনি স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ায় চাকরি পান। এরপর তাঁকে ফিরে দেখতে হয়নি। সম্প্রতিই তিনি বেঙ্গালুরুর এসবিআই ব্রাঞ্চ থেকে চিফ ম্যানেজার পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
এদিকে, দুই মাস আগে থানার দায়িত্বে আসেন ইন্সপেক্টর মঞ্জুনাথ গৌড়া। তিনি কেস ডায়েরি দেখতে দেখতেই খুঁজে পান ৩৫ বছর পুরনো মামলা। ২০০ টাকার জন্য মামলা, এই দেখেই তাঁর নজর কেড়েছিল। এরপরে তদন্ত শুরু হয়।
থানার ইন্সপেক্টর অভিযুক্ত কেশবমূর্তির ফোন নম্বর খুঁজে বের করেন। জানা যায়, তিনি বেঙ্গালুরুতে থাকেন। কিন্তু ২০০ টাকার মামলার জন্য পুলিশ ৪০০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে যেতে রাজি নয়। সুযোগ আসে যখন থানার এক অফিসার স্পোর্টস মিটের জন্য বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল। সেখানে গিয়ে ওই ইন্সপেক্টর কুরিয়র অফিসের নাম করে ফোন করেন। বলেন, একটি পার্সেল আছে, তিনি যেন পার্সেল অফিস থেকে এসে সেই পার্সেল নিয়ে যান। কেশবমূর্তি ওই ফাঁদে পা দিয়ে কুরিয়র অফিসে আসতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই ভেঙ্কটেশের কাছে ফোন যায় সিরসি পুলিশের তরফে। জানানো হয়, ৩৫ বছর আগে তাঁর করা মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই খবর শুনে তিনি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।
থানায় গিয়ে তিনি দেখেন, সত্যিই ৩৫ বছর আগে তাঁর থেকে ২০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া কেশবমূর্তি গ্রেফতার হয়েছেন। কেশব ক্ষমা চেয়ে নেন। এরপরই ভেঙ্কটেশ মামলা প্রত্যাহার করে নেন।