
তিরুবনন্তপুরম: একদিন আগেও ছবির মতো সাজানো ছিল। এক রাতের বৃষ্টি, ভোরেই সবকিছু ধুয়ে মুছে সাফ। কোথায় চা বাগান ছিল, কোথায় জনপদ-কিছুই বোঝার উপায় নেই। চারিদিকে শুধু বড় বড় পাথর, ধ্বংসস্তূপ আর কাদামাটি। কেরলের ওয়েনাডে ভয়াবহ ভূমিধসে এখনও পর্যন্ত ১৫৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। আহত ১২৮ জন। এখনও শতাধিক মানুষ মাটির নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে খবর। কিন্তু কেন এমন বিপর্যয় হল ওয়েনাডে?
বিজ্ঞানীদের অনুমান, একাধিক কারণে কেরলের ওয়েনাডে এমন ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এর পিছনে জলবায়ু পরিবর্তন যেমন দায়ী, তেমনই অতিরিক্ত খনন, বনাঞ্চল ধ্বংসও অন্যতম কারণ। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ISRO) প্রকাশিত ল্যান্ডস্লাইড অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সবথেকে ভূমিকম্প ৩০টি এলাকার মধ্যে ১০টিই কেরলে অবস্থিত। এর মধ্যে ১৩ নম্বর স্থানে রয়েছে ওয়েনাড।
২০২১ সালের একটি গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছিল, কেরলে যত ভূমিধস হয়, তার ৫৯ শতাংশই বনাঞ্চল বা চা বাগান এলাকাতেই হয়। ২০২২ সালের আরেকটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়েছিল যে ওয়েনাডের ৬২ শতাংশ বনাঞ্চলই ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে। ১৮০০ শতাংশ বৃক্ষরোপণ বেড়েছে তার পরের কয়েক বছরে। ওই সমীক্ষাতেই জানানো হয়েছিল, ১৯৫০ সালের আগে ওয়েনাডের ৮৫ শতাংশই জঙ্গল ছিল। জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার কারণে মাটি আলগা হয়েছে। বিশেষ করে যে এলাকাগুলিতে বৃষ্টিপাত বেশি হয় বা পাহাড়ি এলাকা, সেখানে ধসের সম্ভাবনা আরও বেশি।
ধসে বিপর্যস্ত জনপদ।
কোচি ইউনিভার্সিটির ডিরেক্টর এস অভিলাষ আবার জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, আরব সাগরের উত্তাপ বৃদ্ধিই দায়ী এমন বিপর্যয়ের জন্য। অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণও এই জলবায়ু পরিবর্তন। দক্ষিণ-পূর্ব আরব সাগর যেহেতু ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তাই কেরল সহ পশ্চিম ঘাটের এলাকা জলবায়ুর দিক থেকে স্থিতিশীলতা হারাচ্ছে। ডিপ ক্লাউড সিস্টেম তৈরি হচ্ছে, তার জেরে অল্প সময়ে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ধসের সম্ভাবনাও বাড়ছে। ২০১৯ সালে কেরলে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, সেই সময়ও একই প্যাটার্ন দেখা গিয়েছিল।
চলছে উদ্ধারকাজ।
২০১১ সাল থেকেই পশ্চিম ঘাট ইকোলজি এক্সপার্ট প্যানেল ওয়েনাডের পার্বত্য অঞ্চলকে ‘পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল’ ঘোষণা করার দাবি জানানো হয়েছিল। খননে নিষেধাজ্ঞা, নতুন থার্মাল পাওয়ার, হাইড্রোপাওয়ার ও বড় মাপের উইন্ড এনার্জি প্রজেক্টের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার, বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের বিরোধিতায় সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়নি। বিভিন্ন খনিতে অবৈধ খননের জেরে মাটি আলগা হচ্ছে। এর জেরেও ধসের সম্ভাবনা বেড়েছে।