ইম্ফল: একটা সময়, জম্মু ও কাশ্মীরে সেনার বিরুদ্ধে ‘পেলেট গান’, অর্থাৎ, ছররা গুলির বন্দুক ব্যবহারের ব্যাপক অভিযোগ ছিল। জম্মু ও কাশ্মীরে যে কোনও বিক্ষোভ সামাল দিতে ছররা গুলি ব্যবহার করত সেনা। সেই ছররা গুলির আঘাতে, বহু যুবকের চোখ নষ্ট হয়েছে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে গুরুতর আঘাত লেগেছে। জম্মু-কাশ্মীরের সেই ছবি এখন বদলে গিয়েছে। এবার, একই রকম অভিযোগ উঠতে শুরু করল হিংসা-ধ্বস্ত মণিপুরে। ইম্ফল পশ্চিম জেলা-সহ, ইম্ফল উপত্যকার বহু জায়গায় বিক্ষোভকারীদের উপর ছররা গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিআরপিএফ বাহিনীর আওতাধীন ব়্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স বা ব়্যাফের বিরুদ্ধে।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৮ জুলাই ইম্ফলে ছাত্রদের নেতৃত্বে এক বিক্ষোভ প্রদর্শন চলছিল। ইম্ফল থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রের মৃতদেহের ছবি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পরই ওই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল ইম্ফল উপত্যকায়। ওই দিনই মণিপুরে বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে প্রথম পেলেট বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছেন মেইতেই সম্প্রদায়ের ছাত্রদের একাংশ। গুরুতর আহত হয়েছিলেন অনেকে। তাঁদেরই একজন ২১ বছরের উত্তম সোইবাম। মণিপুরের ইম্ফলের রাজ মেডিসিটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন তিনি। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁর দেহ থেকে ইতিমধ্য়ে ৬১টি ছররা গুলি বের করা হয়েছে। তবে, তারপরও বেশ কিছু গুলি তার শরীরেই আটকে আছে।
উত্তম সোইবাম একজন জাতীয় স্তরের উশু (এক ধরনের মার্শাল আর্ট) খেলোয়াড়। তবে তিনি একা নন, ইম্ফলে শয়ে শয়ে ছাত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ছররা গুলির আঘাতে আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। সোইবামের দাবি, ইম্ফল পশ্চিম জেলার সিংজামেইয়ে তাঁর এবং অন্যান্য বিক্ষোভকারীদের উপর ইচ্ছাকৃতভাবেই ছররা গুলি চালিয়েছে ব়্যাফ। মেইতেই ছাত্রদের অভিযোগ, সিআরপিএফ-এর পক্ষ থেকে জায়গায় জায়গায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যাকেই সন্দেহ হচ্ছে, তারা সরাসরি গুলি চালাচ্ছে। সোইবাম জানিয়েছেন, ৮ জুলাই বিক্ষোভের দিন নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালাতে শুরু করার পর, তিনি এবং আরও দুই ছাত্র একটি বাড়িতে লুকিয়ে ছিলেন। ওই বাড়ির দরজার বাইরে থেকে তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল সিআরপিএফ বাহিনী। এমনকি, তিনি গুরুতর আহত হওয়ার পর, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছিল সিআরপিএফ, এমনই দাবি করেছেন উত্তম। পরে মণিপুর পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করেছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছাত্রদের বিরুদ্ধে ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের’ অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মণিপুর পুলিশ। সিআরপিএফ বাহিনীর পক্ষ থেকে এই অভিযোগের বিষয়ে এখনও কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, মণিপুরে হিংসা নিয়ন্ত্রণে মণিপুর পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করার জন্যই কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু, কার্যক্ষেত্রে দুই বাহিনী একে অপরের বিরুদ্ধেই অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে। একদিকে মেইতেই সম্প্রদায় চাইছে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হোক। অন্যদিকে, মণিপুর পুলিশের বদলে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতেই থাকুক বলে, দাবি জানিয়েছে আদিবাসী কুকি সম্প্রদায়।