‘পাপা ড্রামের ভিতরে আছে’, পড়শিদের বলেছিল সৌরভের ৬ বছরের মেয়ে, কেউ যদি গুরুত্ব দিয়ে শুনত…

ঈপ্সা চ্যাটার্জী |

Mar 20, 2025 | 12:38 PM

Merchant Navy Murder: প্রেম করেই ২০১৬ সালে বিয়ে করেছিল সৌরভ ও মুসকান। স্ত্রীকে আরও সময় দেওয়ার জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে দেয় সৌরভ। এই নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বচসা হয়েছিল। মুসকানও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে থাকতে চাইত না, তাই তারা আলাদাভাবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে।

পাপা ড্রামের ভিতরে আছে, পড়শিদের বলেছিল সৌরভের ৬ বছরের মেয়ে, কেউ যদি গুরুত্ব দিয়ে শুনত...
এই ড্রামের ভিতরেই ছিল সৌরভ রাজপুতের দেহ।
Image Credit source: X

Follow Us

লখনউ: মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষেই লন্ডন থেকে ছুটে এসেছিলেন মার্চেন্ট নেভি অফিসার। কিন্তু স্ত্রী এবং তাঁর প্রেমিক যে তাঁকে কুচিকুচি করে ড্রামে ভরে রাখবে, তা কল্পনাও করতে পারেননি। মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতকে খুন করে তাঁর স্ত্রী মুসকান রাস্তোগী ও তাঁর প্রেমিক সাহিল শুল্কা। স্বামীর দেহ লোপাট করে প্রেমিকের সঙ্গে ঘুরতেও গিয়েছিল মুসকান। তবে তাঁদের ছোট্ট মেয়ে বারবার প্রতিবেশীদের বলেছিল, “বাবা ড্রামের ভিতরে রয়েছে।”

গত ৪ মার্চ মার্চেন্ট নেভি অফিসার সৌরভ রাজপুতকে খুন করে তাঁর স্ত্রী। খুনে মদত দেয় স্ত্রীর প্রেমিক। সৌরভের মা, রেণু দেবী বলেন, “ওঁর মেয়ে প্রতিবেশীদের বারবার বলেছিল যে পাপা ড্রামের ভিতরে রয়েছে। তার মানে ও খুন এবং তার পরের ঘটনা জানত।”

কীভাবে সৌরভের দেহ উদ্ধার হল, তার বর্ণনা করতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে রেণু দেবী বলেন, “ওরা (মুসকান ও সাহিল) আমার ছেলেকে খুন করে ঘুরতে চলে যায়। বাড়িওয়ালা আগেই ওদের ঘর ফাঁকা করে দিতে বলেছিল। যখন ওরা ফিরে আসে, বাড়িওয়ালা শ্রমিক পাঠায় ঘর সারাইয়ের জন্য। কিন্তু ঘরের ভিতরে রাখা ওই বড় নীল ড্রামটা কিছুতেই সরাতে পারছিল না ওরা। জিজ্ঞাসা করায় মুসকান বলেছিল, ড্রামে আবর্জনা রয়েছে। তবে ড্রামের ঢাকনা খুলতেই একটা পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা ঘরে। যতক্ষণে পুলিশ আসে, ততক্ষণে মুসকান বাপের বাড়ি পালিয়ে গিয়েছিল।”

এর আগে মুসকানের মা, কবিতা রাস্তোগীও বলেছিলেন যে মুসকানই সৌরভকে খুন করেছে। তাঁর কাছে অপরাধ স্বীকার করতেই তিনি পুলিশে অভিযোগ জানান। তাঁর দাবি, অভিযুক্ত সাহিলের সঙ্গে মাদকের নেশা করত মুসকান। সেই কারণে কখনও বাপের বাড়িতেও যেতে চাইত না।

সৌরভের খুনের ঘটনা তাঁর মেয়ে দেখেছিল কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে কবিতা দেবী বলেন, “নিশ্চয়ই ও কিছু দেখেছিল। প্রতিবেশীদের বলেছিল, পাপা  ড্রামে রয়েছে। সেই কারণেই ওরা সরিয়ে দিয়েছিল নাতনিকে”। চোখে জল নিয়েই মেয়ের ফাঁসির সাজা দাবি করেছেন তিনি।

জানা গিয়েছে, প্রেম করেই ২০১৬ সালে বিয়ে করেছিল সৌরভ ও মুসকান। স্ত্রীকে আরও সময় দেওয়ার জন্য মার্চেন্ট নেভির চাকরি ছেড়ে দেয় সৌরভ। এই নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বচসা হয়েছিল। মুসকানও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে থাকতে চাইত না, তাই তারা আলাদাভাবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। ২০১৯ সালে তাদের মেয়ে হয়।  কিন্তু এরপরই সৌরভ জানতে পারে যে মুসকানের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে সাহিলের সঙ্গে। এই নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র বচসা হয়। এমনকী সৌরভ ডিভোর্সের কথাও ভেবেছিল, কিন্তু মেয়ের মুখ চেয়ে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

২০২৩ সালে ফের মার্চেন্ট নেভি-তে যোগ দেয় সৌরভ। তাঁর পোস্টিং লন্ডনে হয়। স্বামীর অবর্তমানে ফের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মুসকান-সাহিলের। মার্চ মাসে মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে সৌরভ দেশে ফিরতেই মুসকান ও সাহিল বুঝতে পারে, তারা আর দেখা করতে পারবে না। প্রেমে পথের কাঁটা সরাতেই সৌরভকে খুন করে তাঁরা।