
ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ও বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা BRO-এর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ২০২৫ সালের ১ অক্টোবরের কথা। প্রজেক্ট হিমাঙ্কের অধীনে পূর্ব লাদাখের ১৯ হাজার ৪০০ ফুট উচ্চতায় মিগ লা মোটর পাস তৈরি করে ফেলল বিআরও। এতদিন বিশ্বের সর্বোচ্চ মোটর পথ ছিল ১৯ হাজার ২০ ফুট উচ্চতার উমলিং লা। আর এবার এই নয়া রাস্তা সেই রেকর্ড ছিনিয়ে নিল। নতুন এই রাস্তা তৈরি কেবলমাত্র একটি ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল, এমন নয়। এটি মানুষের অদম্য জেদ ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক।
মিগ লা-য় রাস্তা তৈরি ছিল এক চরম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর যুদ্ধ। এই এলাকার তাপমাত্রা বেশিরভাগ সময়ই নেমে যায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। বছরে মাত্র ৬ মাস কাজ করা যায়। আর এই সব জায়গায় সাধারণ মানুষের জন্য শ্বাস নেওয়ায় বেশ কঠিন। ফলে, এখানে সাধারণ মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করাও খুবই কষ্টসাধ্য। উল্লেখ্য, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া এভারেস্টের বেস ক্যাম্পের যা উচ্চতা, মিগ লা-র উচ্চতা তার চেয়ে অনেক বেশি। বিআরও-এর ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল রঘু শ্রীনিবাসন এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য BRO কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।
এই পথ শুধু রেকর্ডই গড়েনি, দেশের প্রতিরক্ষার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হানলে থেকে ফুকচের কাছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা LAC পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য মিগ লা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি সীমান্তের গ্রামগুলির সঙ্গে দেশের বাকি অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাবে। ব্রিগেডিয়ার বিশাল শ্রীবাস্তব এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই রাস্তা আমাদের সামরিক রসদ ও বাহিনীর দ্রুত চলাচলের জন্য অপরিহার্য। এটি সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনীর প্রস্তুতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে’।
মিগ লা খুলে দিয়েছে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের এক নতুন দিগন্ত। আশা করা যায় নতুন এই রাস্তা বিশ্বজুড়ে বাইক আরোহী ও পর্বতারোহীদের কাছে এটি একটি মনোমুগ্ধকর গন্তব্য হয়ে উঠবে। লক্ষ্য ছিল ২০২৮ সালের মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা, কিন্তু BRO তা নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ করে ফেলেছে। এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর কর্নেল পোনুং ডোমিং বলেন, ‘প্রতিটা ক্ষেত্রে বিআরও দেশকে গর্বিত করে। আমাদের সেনাবাহিনী ও বিআরও-এর কর্মীদের প্রতি এটা শ্রদ্ধার্ঘ্য’।
এই ঐতিহাসিক মাইলফলকের সাক্ষী হতে পেরেছে News9। ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে যখন এই রাস্তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়, তখন থেকে ২০২৫ সালের ১ অক্টোবরের মুহূর্তেও উপস্থিতি ছিল নিউজ নাইন। এই অর্জন কেবল সামরিক শক্তি নয়, দেশের সম্মিলিত সংকল্পের প্রমাণ। কঠিন পরিস্থিতিতেও ভারত যে দ্রুত গতিতে সীমান্ত পরিকাঠামো নির্মাণে সক্ষম, মিগ লা তারই জলজ্যান্ত উদাহরণ।
এই রাস্তা ভারতের সাহস ও সংকল্পের প্রতীক। এই পথ নতুন ভারতের প্রতীক। প্রতিকূলতা জয় করে এগিয়ে চলার যে মন্ত্র, মিগ লা সেই মন্ত্রই শিখিয়ে গেল গোটা দেশকে।