
চার বছর পর ভারতে এলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর দিল্লিতে অবতরণের আগে থেকেই চর্চার কেন্দ্রে পুতিনের এই সফর। অবশ্য তার একাধিক কারণও রয়েছে। এমনকি দিল্লিতে নামার পরও প্রোটোকল ভেঙে প্রধানমন্ত্রীর বিমানবন্দর থেকে পুতিনকে আনতে যাওয়া বা দেখা হওয়ার পর আলিঙ্গন, এই সবই ধীরে ধীরে আসছিল স্পটলাইটে। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিস্ময় অপেক্ষা করছিল এয়ারপোর্টেই।
প্রধানমন্ত্রী সাধারণত চাপেন তাঁর রেঞ্জ রোভারে। কিন্তু এদিন সেই রেঞ্জ রোভার বা রুশ প্রেসিডেন্টের নিজের গাড়ি অরাস সেনাটের বদলে পুতিন ও প্রধানমন্ত্রী মোদী চাপলেন একটি সাদা টয়োটা ফরচুনারে। ফরচুনারের সিগমা ৪ ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন ভ্যারিয়েন্টের এই গাড়িতে রয়েছে মহারাষ্ট্রের রেজিস্ট্রেশন প্লেট। কিন্তু রেঞ্জ রোভার বা প্রধানমন্ত্রীর গ্যারেজে থাকা মার্সিডিজ ছেড়ে হঠাৎ কেন এই জাপানি ব্র্যান্ডের এসইউভিকে বেছে নিলেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান? নিছকই কাকতালীয় নাকি পিছনে রয়েছে অন্য কোনও অঙ্ক?
পুতিনকে স্বাগত জানাতে ঠিক যে মুহূর্তে প্রোটোকল ভাঙলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় গোটা বিশ্ব বুঝতে পারল ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব ঠিক কতটা গভীর। আজ ভাঙা-গড়ার বিশ্বে বন্ধুত্ব টিকিয়ে কীভাবে রাখতে হয়, তা যেন গোটা বিশ্বকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভারত ও রাশিয়া। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে তাঁরা যখন রওনা হলেন, তখন গোটা পৃথিবীর কৌতূহল হয়ত শেষ সীমা অতিক্রম করেছে। প্রধানমন্ত্রীর গ্যারেজে রয়েছে ব্রিটিশ রেঞ্জ রোভার ও জার্মান মার্সিডিজ মেব্যাখের মতো ইউরোপীয় গাড়ি। আবার ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে যখন জার্মানি ও ব্রিটেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তখন ওই দুই দেশের সংস্থার গাড়ি এড়িয়ে যাওয়াটা কি আসলে একটা কূটনৈতিক কৌশল?
কূটনীতিক ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ব্যাপারটাকে বলছেন ‘ফরচুনার ডিপ্লোমেসি’। তাঁদের মতে, ইউরোপীয় গাড়ি এড়িয়ে আসলে পশ্চিমী বিশ্বকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন দুই রাষ্ট্রপ্রধান। হয়ত, ‘কোন চাপের কাছে মাথা নত না করা’র বার্তা দিতে চেয়েছেন তাঁরা। অনেক বিশেষজ্ঞই একে বলছেন, ‘আ মেসেজ টু দ্য ওয়েস্ট’। ফরচুনার জাপানি হলেও ভারতেই এর উৎপাদন হয়, যা আবার ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের সঙ্গেও মানানসই।
যদিও সূত্র বলছে এই ফরচুনারে ওঠার পিছনে রয়েছে এক অতি সাধারণ ব্যবহারিক কারণ। প্রধানমন্ত্রীর রেঞ্জ রোভারে দোভাষীদের বসার জন্য কোনও জায়গা নেই। অর্থাৎ, এই গাড়িতে নেই কোনও থার্ড রো। কিন্তু ফরচুনারে সেই অতিরিক্ত আসন থাকায় মোদী ও পুতিনের সঙ্গে ওই গাড়িতে ছিলেন দোভাষীরাও। শুধু তাই নয়, এই ফরচুনারকে ছাড়পত্র দিয়েছে ভারত ও রাশিয়া, দুই দেশেরই নিরাপত্তা এজেন্সিগুলো।
কারণ যা-ই হোক, কূটনৈতিক মঞ্চে একটি সাদা টয়োটা ফরচুনার রাতারাতি হয়ে উঠল বিশ্ব রাজনীতির প্রধান আলোচ্য বিষয়। এটি প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনায় প্রতীকী পদক্ষেপ ও কিছু একটা হবে ও সেই হওয়ার আগে একটা হাওয়া তৈরি করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। পুতিনের এই সফর আগামীর কূটনীতিতে যে বিরাট প্রভাব ফেলবে, তা এক প্রকার নিশ্চিত।