
স্বাধীনতার পর ভারতের কাছে অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু ১৯৪৭-এর পর থেকে অন্তত ৪০ বছর ধরে ভারতকে ভুগতে হয়েছে শুধুমাত্র জওহরলাল নেহরুর ভুল ও দুর্বল নীতির জন্য। এই ভাষাতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে বিঁধলেন দেশের বিশিষ্ট বিনিয়োগকারী, আরিন ক্যাপিটালের চেয়ারম্যান মোহনদাস পাই। স্ট্যান্ডফোর্ড ইন্ডিয়া কনফারেন্স ২০২৫-এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে নেহরুকে তীব্র আক্রমণ করে মোহনদাস বলেন, ‘পণ্ডিত নেহরুর অনেক কাজের জন্য আমার মনে তাঁর প্রতি সম্মান থাকতে পারে, কিন্তু কাশ্মীর হোক বা চিন — পণ্ডিতজি ভারতের জন্য যে দুর্বল নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার জন্য আজও আমাদের ফল ভুগতে হচ্ছে।’ মোহনদাসের বক্তব্যের স্পষ্ট ইঙ্গিত, পহলগাঁওতে পাক জঙ্গি হানায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু ও পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের দীর্ঘদিনের জটিলতা নিয়ে।
মোহনদাস মনে করিয়ে দেন, ১৯৪৭-এ ভারতই ছিল এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি। ফলে ভারতের কাছে অনেক সুযোগ ছিল নিজেদের আর্থিক শ্রীবৃদ্ধির। কিন্তু সোশ্যালিস্ট পলিসি দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারকে নিম্নমুখী করে বলে তাঁর অভিযোগ। পদ্মশ্রী প্রাপ্ত মোহনদাস দীর্ঘদিন দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত, ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও ও বোর্ড মেম্বার। তাঁর কথায়, ‘যুদ্ধে চিন যখন কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে, গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত, এমনকী জাপানও প্রায় শেষ হয়ে গেছিল, তখনও কিন্তু ভারতীয় শিল্পমহলের উৎপাদন ক্ষমতায় ঘাটতি ছিল না। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং বেস অটুট ছিল। কিন্তু আমরা তার লাভ ঘরে তুলতে ব্যর্থ হই।’ তিনি আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তত ২৫ লক্ষ ভারতীয় যুদ্ধে গিয়েছিলেন। ব্রিটেনের কাছ থেকে আমাদের ২ বিলিয়ন পাউন্ড পাওনা, সে সব দিকে নজর না দিয়ে আমরা দেশে সোশ্যালিজম চালু করি। দিল্লিতে বসে থাকা গুটিকয়েক সরকারি বাবু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, এভাবেই দেশ শাসন করবেন। কী লাভ হল? ব্রিটিশ শাসকরা গেল, আর দিশি শাসকরা এল। আম ভারতীয়র জীবনযাত্রা বদলাল না।’
মোহনদাস মনে করিয়ে দেন, ‘১৯৫০-১৯৮০ পর্যন্ত ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার ছিল বছরে মাত্র ৩.৫ শতাংশ। অথচ এশিয়ায় বৃদ্ধির হার তখন ৬.৫ শতাংশ। ১৯৫০-এর চেয়েও ভারতীয়রা ১৯৮০-তে এসে বেশি গরিব হয়ে পড়েন। উদার অর্থনীতির জন্য যখন দেশের দরজা খুলল, তখন ভারতের ভাঁড়ারে মা ভবানী। ১৯৯১-তে এসে উদ্যোগপতিরা অবশেষে সরকারি নীতির নাগপাশ থেকে মুক্তি পেলেন।’ তাঁর দাবি, আজ ভারত ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশ। বিনিয়োগের পিপিপি মডেল ধরলে প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন। ভারতের সামনে শুধুই চিন (৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার) ও আমেরিকার (৩৯ ট্রিলিয়ন ডলার) অর্থনীতি। দেশের বর্তমান শিল্পবান্ধব পরিস্থিতির প্রশংসা করে তিনি এটাও বলেন, ‘ভারতের শিল্পজগতের সক্ষমতা বিশ্বের মধ্যে পঞ্চম।’ আগামী পাঁচ বছরে ভারত তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।