দেশে আয়োজিত হচ্ছে প্রথম সহকারিতা সম্মেলন। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে এই সম্মেলন। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হবে সহকারিতা সম্মেলন। গোটা দেশের প্রায় ২ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এই সম্মেলনে যোগদান করবেন। একাধিক মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে এই অনুষ্ঠান।
দেশব্যাপী সহকারিতার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একটি পৃথক প্রশাসনিক, আইনি এবং নীতিগত কাঠামো তৈরি করতেই সম্প্রতি মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণে সহকারিতা মন্ত্রক নামক একটি নতুন মন্ত্রক চালু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মন্ত্রকের প্রথম মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ এই মন্ত্রকেরই প্রথম সম্মেলন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন দেখেছেন, তা পূরণে সহকারিতা মন্ত্রককে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধিতেও আমাদের সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। আসুন আমরা সকলে মিলে শপথ নিই, নতুন উদ্য়োগের সঙ্গে আমরা সহকারিতার কাজ শুরু করব এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণ করব।
প্রধানমন্ত্রী চান প্রতিটি মানুষ বিকাশের অংশ হোক। প্রতিটি পরিবার সহযোগিতা পাক, প্রতিটি সমৃদ্ধ পরিবার থেকে দেশকে সমৃদ্ধ করা হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
কো-অপারেটিভ উদ্যোগে কর প্রদান, সরকারের সঙ্গে বিরোধ, সরকারী কর্মীদের অসহযোগিতা-এই ধরনের যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে আমি অবগত। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি যে এই সমস্ত সমস্যার সমাধান করব। ছোট-বড় যাবতীয় সমস্য়া নিয়ে আমাকে চিঠি লিখুন। আমি সেই চিঠি পড়ব এবং দ্রুত সমস্যার সমাধান করব।
মৎসজীবীদের জন্যও কো-অপারেটিভ সংস্থার পরিকল্পনা। জনজাতিদের জন্যও আলাদাভাবে কো-অপারেটিভ সংস্থা আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। সহকারিতা আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা সফল করতে আমরা সর্বসমম্মতিক্রমে চেষ্টা করব।
সহকারিতা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার অন্তর্গত করতে হবে সহকারিতা। ভারত সরকারের সঙ্গে সহকারিতা মন্ত্রক কাজ করছে। এ বার স্ব-সহায়তা সংস্থাও গঠন করা হবে। এই বিষয়ে আমরা কাজ করছি।
৬ লক্ষ গ্রামে ৬৩ হাজার প্যাক্স তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আমাদের লক্ষ্য, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৩ লক্ষ প্যাক্স তৈরি করা হবে। সমস্ত প্যাক্সের কম্পিউটারাইজেশন করা হবে। প্যাক্স, জেলা কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক ও নাবার্ডকে সংযুক্তির জন্য আধুনিক প্রযুক্তি আনা হবে। একই সফটওয়্যার দিয়ে পরিচালিত হবে।
উন্নয়নের পথে আরও এগিয়ে যেতে আমরা স্থির করেছি নতুন সরকার নীতি আনার। ২০২১-২২ সালে নতুন সরকার নীতি আনবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ২০০২ সালে অটল বিহারীজী নতুন সরকার নীতি এনেছিলেন। এবার আজাদির অমৃত মহোৎসবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন সরকার নীতি আনবেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যে সহকারিতা মন্ত্রক তৈরি হয়েছে, তা সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখেই চলবে, কোনও রাজ্যের সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না। তাই রাজ্যগুলিকেও বলছি, আপনাদের এই বিষয় নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সরকারি প্রকল্পগুলিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান যোজনার মাধ্যমে দেশের ১১ কোটি কৃষক উপকৃত হয়েছেন, স্টার্ট আপ নিয়ে নতুন উদ্যোগ শুরু করা হয়েছে, তার জন্য অর্থসাহায্যও দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ ক্ষেত্রে এই উদ্যোগগুলি পৌঁছলে তবেই দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী যে সহকারিতা মন্ত্রক বানিয়েছেন, তার প্রধান লক্ষ্য হল গ্রামীণ ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বিকাশ পৌঁছে দেওয়া। বিগত ৭ বছরের প্রধানমন্ত্রী আমুল পরিবর্তন এনেছেন। ২০০৯-১০ সালে কৃষিক্ষেত্রে বাজেট ছিল ১২ হাজার কোটি, ২০২০-২১ সালে সেই বাজেটই বাড়িয়ে ১ লক্ষ ৩৪হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রকে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়াই সহকারিতা মন্ত্রকের লক্ষ্য।
সময় এসে গেছে নতুন লক্ষ্য স্থির করা এবং সেই লক্ষ্য পূরণের কাজে লেগে পড়া। আমাদের পূর্বপুরুষরা কো-অপারেটিভের ভিত তৈরি করে দিয়েছেন, আমাদের কাজ হল সেই শক্তিশালী ভিতের উপর ইমারত তৈরি। সেই উদ্দেশ্যেই প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রক তৈরি করেছেন। সংকল্প, পরিশ্রমের উপরই আমাদের সাফল্য নির্ভর করছে।
দেশের ৫১ শতাংশ গ্রামেই ছোট-বড় কো-অপারেটিভ সংস্থা কাজ করে। প্রায় সাড়ে ৮ লাখেরও বেশি ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সংস্থা রয়েছে, ৬০ লাখেরও বেশি সরকারি সংস্থা রয়েছে। এছাড়াও সহায়তা ব্যঙ্ক রয়েছে, এই সংস্থাগুলির সাহায্যেই কৃষকরা উপকৃত হতে পারেন।
আমাদের মতো কৃষি নির্ভর দেশে ফসলের বীজ কেন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে? কোনও কো-অপারেটিভ সংস্থা কি এই উদ্যোগ নিতে পারে না? গোটা বিশ্বজুড়ে ফুড প্রসেসিংয়ের কাজ হচ্ছে। কৃষকরা কেন পারবে না? আপনারা সকলেই কো-অপারেটিভ কী, এর শক্তি কী, সেই বিষয়ে আপনারা অবগত। এই কো-অপারেটিভ সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়েই শিল্প, বাণিজ্য ক্ষেত্রে নয়া উদ্যোগ নেওয়া হোক।
কৃষক ভারতী কোঅপারেটিভ (KRIBHCO)-ও একই ধরনের সংস্থা। এর সদস্যদের এক বছরেই ৩১৮ কোটি টাকার লাভের অঙ্ক বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস এই কো-অপারেটিভ সংস্থার মাধ্যমেই আমরা আত্মনির্ভর হয়ে উঠব, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার আমাদের আমদানি করতে হবে না, দেশেই উৎপাদন হবে।
ইফকো দেশের কৃষকে এক নতুন দিশা দেখিয়েছে। ১৯৬৬ সালে ৫৭টি কো-অপারেটিভ সংস্থাকে নিয়ে একটি সোস্যাইটি তৈরি করা হয়, সেটিই আজ বড় হয়ে ৩৬ হাজারেরও বেশি কো-অরপারেটিভ সংস্থাকে নিয়ে ইফকো সাড়ে পাঁচ কোটিরও বেশি কৃষককে উপকৃত করছে। কো-অপারেটিভের সবথেকে সুবিধা হল, যে পরিমাণ অর্থ লাভ হয়, তা মালিকের কাছে নয়, প্রতিটি সদস্যের কাছে পৌঁছে যায়।
লিজ্জত পাঁপড়ও কিন্তু কো-অপারেটিভ সংস্থা। ১৯৫৯ সালে যশবন্তী বেন পোপট ৮০ জন মহিলাকে নিয়ে গুজরাটে লিজ্জত পাঁপড়ের সূচনা হয়। ২০১৯ সালে নিজ্জত পাপড়ের ব্যবসা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০০ কোটিতে। ৪৫ হাজারেরও বেশি মহিলা লিজ্জত কো-অপারেটিভের অংশ। এই সাফল্যের গল্প দেশের মহিলাদের জন্য অনুপ্রেরণা।
আমি গুজরাটের বাসিন্দা, তাই আমুলের সূচনা দিয়েই আমি সহকারিতার প্রাসঙ্গিকতা বোঝাবো। সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের অনুপ্রেরণাতেই আমুল সংস্থা তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে উৎপাদিত সমস্ত দুধই একটি সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই দুধ নিয়ে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই সময় সর্দার পটেল ভুবন ভাইকে বলেছিলেন যে, যতদিন আপনারা নিজেরা দুধ বিক্রি করার পদক্ষেপ নেবেন না, ততক্ষণ এই আন্দোলনের কোনও প্রাসঙ্গিকতা থাকবে না। সেখান থেকেই সূচনা হয়েছিল আমুলের। সেই সংস্থারই ২০২০-২১ সালে টার্নওভার ৫৩ হাজার কোটি পার করল।
গ্রামীণ অর্থনীতিতে উন্নতি ও সামাজিক পুঁজি বাড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব আমরা। দেশের জনগণের স্বভাবেই সহকারিতা রয়েছে। সেই কারণেই ভারতে কখনওই সহকারিতা আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯০৪ থেকেই দেশে সহকারি আন্দোলনের সূচনা হয়েছে। অনেক ওঠাপড়া দেখেছি আমরা, কখনও দ্রুতগতিতে এগিয়ে গিয়েছি আমরা, কখনও আবার পড়ে গিয়েছি, কিন্তু কোনও দিনই থেমে যাইনি আমরা।
আমাদের হয়তো আর্থিক ক্ষমতা ওত বেশি নেই, কিন্তু এত সংখ্যক সহকারি কর্মী যদি একজোট হই, তবে সমস্ত লক্ষ্যপূরণই সম্ভব। মোদীজিকে আশ্বাস দিচ্ছি যে, আপনার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির যে স্বপ্ন রয়েছে, তা পূরণ করতে আমরা সকলে আপ্রাণ চেষ্টা করব।
সহকারিতা মন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “প্রতিটি গ্রামকে কোঅপারেটিভের সঙ্গে যুক্ত করে সহকারি থেকে সমৃদ্ধ করা এবং গ্রামের সমৃদ্ধি থেকে সমগ্র দেশেই সমৃদ্ধি আনাই আমাদের লক্ষ্য। সহকারিতা শব্দটি সহ এবং কারিতা- এই দুটি শব্দ মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে। সকলে মিলিত হয়ে এক দিশায় কাজ করাই সহকারিতার লক্ষ্য।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করেন যে সহকারিতা মন্ত্রকের প্রয়োজন কী? আমি বলছি, বর্তমন সময়ে দাঁড়িয়ে সহকারিতা আন্দোলনে গতি আনার জন্য এই মন্ত্রকের প্রয়োজন ছিল। দেশের বিকাশে সহকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখনও আমাদের অনেক লক্ষ্যপূরণ বাকি, সেই লক্ষ্যপূরণে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা করতে হবে। দেশের গরিব কৃষক, মহিলা ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষদের সামনে এগিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সহকারিতা মন্ত্রকের দ্বারাই এই উন্নতি সম্ভব।”
দীনদয়াল উপ্যাধ্যায়ের জন্মদিন দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা। পণ্ডিত দীনদয়ালের অনুপ্রেরণাতেই সহকারিকার কাজে প্রবেশ করেছিলাম। দেশে গরিব কল্যাণ ও সহকারিতার চিন্তাভাবনার সূচনা তিনিই করেছিলেন। দেশে প্রথম বিকাশ, অন্ত্যোদ্যয়ের কথা তিনিই বলেছিলেন। ওনার জন্মদিনেই এই অনুষ্ঠান হওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর সহকারিতা মন্ত্রক তৈরি করায় প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানালেন স্বরাষ্ট্র ও সহকারি মন্ত্রী অমিত শাহ। একইসঙ্গে সহকারিতা মন্ত্রকের সকল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বললেন, “অবহেলার সময় পার হয়ে গিয়েছে। এ বার জোর কদমে কাজ শুরু করতে হবে সকলকে। কৃষক, গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে যাতে সহজেই সমস্ত পরিষেবা পৌঁছে যায়, তবে সহকারিতা আন্দোলন সফল হবে।”
প্রথম সহকারিতা সম্মেলন অনুষ্ঠানেই দারুণ সাফল্য। অনুষ্ঠান শুরু হতেই দেশ-বিদেশ জুড়ে ৩ কোটি ৫৬ লক্ষেরও বেশি দর্শক অনলাইন ও অন্যান্য গণমাধ্যমের সাহায্যে এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
দেশের একেবারে তৃণমূল স্তরের মানুষের কাছে সুবিধা পৌঁছে দিতেই সহকারিতা বা সাহায্য় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্যে সূচনা হয়েছিল এই মন্ত্রকের। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘সহকারিতা থেকে সমৃদ্ধির’ লক্ষ্যপূরণের সেই কাজই করছেন স্বরাষ্ট্র ও সহকারিতা মন্ত্রী অমিত শাহ।
মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণের সময় সহকারিতা মন্ত্রক নামে যে নতুন মন্ত্রকটির সূচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তা সামলানোর গুরুভার তুলে দিয়েছিলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই। শনিবার তাঁর উপস্থিতিতেই সূচনা হবে জাতীয় সহকারিতা সম্মেলনের।
केन्द्रीय गृह एवं सहकारिता मंत्री श्री @AmitShah जी कल (25 सितंबर, 2021) ‘राष्ट्रीय सहकारिता सम्मेलन’ को संबोधित करेंगे।
समय: सुबह 11 बजे
स्थान: आईजीआई स्टेडियम, नई दिल्ली#SahkarSeSamriddhi@MinOfCooperatn pic.twitter.com/P943HJRv1O— Office of Amit Shah (@AmitShahOffice) September 24, 2021