
নয়া দিল্লি: দেশজুড়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কেরল সহ একাধিক রাজ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার বিভিন্ন সংগঠনেই হানা দিয়েছে কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা। এখনও অবধি ১০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে পিএফআইয়ের প্রধান পারভেজ আহমেদকে। এবার প্রশ্ন হল, এই পিএফআই বা পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া কী? কেনই বা নিষিদ্ধ করা হল এই সংগঠনকে?
পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া হল একটি উগ্রপন্থী ইসলামিক সংগঠন। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তিনটি মুসলিম সংগঠন একত্রিত হয়ে এই সংগঠন তৈরি করা হয়। ২০০৬ সালে গঠিত এই সংগঠনের নাম ছিল ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট। পরবর্তী সময়ে মানিথা নীতি পাসারাই, কর্নাটক ফোরাম ফর ডিগনিটি সহ একাধিক সংগঠন মিলিত হয়ে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া তৈরি করে। দেশবিরোধী ও সমাজবিরোধী কার্যকলাপের সঙ্গেই যুক্ত ছিল এই সংগঠন। বিভিন্ন রাজ্যে এই সংগঠনের শাখা রয়েছে। যদিও পিএফআই-র তরফে নিজেদের নব্য-সামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করা হয়। সংস্থার দাবি, তারা সমাজের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। কেরল ও কর্নাটকে প্রায় সময়ই পিএফআই ও সংঘ পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও সামনে আসে।
২০১২ সালে কেরল সরকারের তরফে জানানো হয়, পিএফআই আসলে নিষিদ্ধ সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়াই। তারাই নাম বদলে এই নতুন সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। এরপরই কেরল সরকারের তরফে পিএফআইয়ের ফ্রিডম প্যারেডের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। যদিও পরে পিএফআই কেরল হাইকোর্টে করে। সেই সময় আদালতের তরফে সরকারের সিদ্ধান্তকে খারিজ করে দেওয়া হলেও, ওই সংগঠনের উপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তা বজায় রাখে। কেরল সহ একাধিক রাজ্যেই বর্তমানে নিষিদ্ধ পিএফআই। কেন্দ্রের তরফেও এই সংগঠনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।
বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে পিএফআই সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র, বোমা, গানপাউডার, তলোয়ার সহ একাধিক জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয় যে, এই সংগঠনের সঙ্গে তালিবান ও আল-কায়েদার যোগ রয়েছে। ২০১২ সালে এই সংগঠন বেআইনি কার্যকলাপ আইন বা ইউএপিএ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়।
এই সংগঠনের বিরুদ্ধে বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, খুন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো, দাঙ্গা, লাভ জিহাদের মতো একাধিক অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়া ও আর্থিক সাহায্য করার অভিযোগও করা হয়।
শুধু সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেওয়াই নয়, দাঙ্গা ও খুনের অভিযোগও রয়েছে এই সংগঠনের সদস্যদেলর বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে কেরলের কোঝিকোড়ে দাঙ্গা বাঁধানো ও আটজন হিন্দুকে খুন করার অভিযোগও ওঠে পিএফআই সদস্যদের বিরুদ্ধে।
চলতি মাসের শুরু থেকেই এনআইএ দেশ জুড়ে তল্লাশি শুরু করে। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, অন্ধ্র প্রদেশের ৪০ টি জায়গায় তল্লাশি চালায় এবং চারজনকে আটক করে। ওই তল্লাশি অভিযানে এনআইএ বিভিন্ন ডিজিটাল নথি, দুটি ছোরা ও ৮ লক্ষ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বরও অন্ধ্র প্রদেশ, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কর্নাটক সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। এদিন সকালে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালায় এনআইএ। পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ, কেরল, কর্নাটক, তামিলনাড়ু সহ ১০টিরও বেশি রাজ্যে তল্লাশি চালানো হয়। প্রায় ১০০-রও বেশি পিএফআই সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।