
ভারতের হাতে জাদু চাকি। নিখুঁত টার্গেটে মিসাইল হামলা করতে আর যুদ্ধবিমান নিয়ে ওড়ার প্রয়োজন নেই। ছোট একটা চাকি উড়িয়েই প্রিসিশান গাইডেড মিসাইল ফায়ার করা সম্ভব। চাকি অর্থাত্ চালকহীন ড্রোন। এই ড্রোন মিসাইল নিয়ে আকাশে উড়বে। এবং নির্দিষ্ট জায়গা থেকে টার্গেটে লক করে মিসাইল ফায়ার করবে। শুক্রবার সকাল ১১টা ও বিকেল তিনটেয় ড্রোনবাহী মিসাইলের পরীক্ষা চালায় ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা ডিআরডিও। অন্ধ প্রদেশের কুর্নুলে ন্যাশনাল টেস্টিং রেঞ্জে দুটি পরীক্ষাই ১০০ শতাংশ সফল।
এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের দাবি, নিজস্ব প্রযুক্তিতে মানবহীন যান থেকে মিসাইল ফায়ার করা সব অর্থেই প্রতিরক্ষায় মাইলস্টোন। এই সাফল্য বলে দিচ্ছে, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির এলিট দুনিয়ায় ঢুকে পড়েছে ভারত। শুক্রবার ড্রোন থেকে যে মিসাইল পরীক্ষা হল, তার পোশাকি নাম ULPGM-V3. ডাকনাম জাদু-চাক্কি।
ULPGM-V3 মিসাইলের বিশেষত্ব কী? কীভাবে এই মিসাইল ড্রোনের মধ্যে সেঁধিয়ে টার্গেটের উপর আঘাত করে? এই ULPGM-V3, ভারতের মিসাইল ফ্যামিলির নিউ বর্ন মেম্বার। ওজন প্রায় সাড়ে ১২ কেজি। ওজন কম হওয়ায় এটি সহজেই ড্রোনের মধ্যে ফিট হয়ে যায়। দিনে ৪ কিলোমিটার এবং রাতে আড়াই কিলোমিটার পর্যন্ত নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। অ্যাকুইরেসি রেট প্রায় ৯৪ শতাংশ। অর্থাত্ ৯৪ শতাংশ নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। এর মাল্টিপাল ওয়ারহেড থেকে একই সময়ে একাধিক টার্গেটে আঘাত করা সম্ভব। একে বলা হচ্ছে ওয়ান ইন থ্রি। অর্থাত্ একটা অস্ত্র। তিনটে কাজ। এক, শক্রর উপর মিসাইল হামলা। দুই, খুব কম খরচে হামলা। তিন, আত্মঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করেই হামলা।
ভারত ডায়োনামিক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এই মিসাইল তৈরি করেছে আদানি ডিফেন্স। চলতি বছর বেঙ্গালেরুতে অ্যারো ইন্ডিয়া শো’তে এই মিসাইল প্রকাশ্যে আনা হয়। তবে ULPGM-V3-কে নিয়ে তখন বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ডিআরডিও (DRDO) সূত্রে খবর, এই মিসাইলের জন্য বিশেষ ড্রোন প্রয়োজন। UAD বা অ্যানম্যানড আর্মার ভেহিকেলস ক্যাটেগরির এই ড্রোন মিসাইল ফায়ার করে নিরাপদে ফিরে আসবে। আদানি, ভারত ডায়ানোমিক্স সহ ৬টি ভারতীয় সংস্থা এই প্রকল্পে যুক্ত ছিল। মিসাইলবাহী ড্রোনকে অপারেশন রেডি করার দায়িত্ব ছিল ডিআরডিও-র উপর।
অপারেশন সিদুঁরে ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের ভিতরে জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ধ্বংস করতে প্রিসিশান অ্যাটাক করেছিল। রাফাল, সুখোই এমকে থার্টি, মিরাজ টু থাউজেন্ড – একাধিক যুদ্ধবিমান থেকে মিসাইল ছুঁড়েছিল বায়ুসেনা। সেই সময় জাদু চাকি হাতে থাকলে কী যুদ্ধবিমান ওড়ানোর প্রয়োজন পড়ত না? অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তারা বলছেন, সেই সময় ভারত ৩০০ পাকিস্তানের ৩০০ কিলোমিটার ভিতরে হামলা চালিয়েছিল। ULPGM-V3- সেই ক্ষমতা নেই। তবে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে, ছোট এলাকায় প্রিশিসন স্ট্রাইকের ক্ষেত্রে এর জুড়ি নেই। সবচেয়ে বড় কথা দুনিয়ার পঞ্চম দেশ হিসাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে ড্রোন থেকে মিসাইল ছোঁড়ার দক্ষতা দেখিয়েছে ভারত। বড় এলাকায় আঘাত হানতে ব্রহ্মসের মতো ক্ষেপণাস্ত্র তো রইল-ই। ব্রহ্মসের জন্যও মানবহীন ড্রোন তৈরির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো। চলতি বছরেই সেনার হাতে আসতে পারে মিনি ব্রহ্মস।