বালেশ্বর: রেলের সংকেতের ‘ভুলে’ই কি ঘটে গেল এত বড় দুর্ঘটনা? রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের প্রাথমিক তদন্তের পর এমনই মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার রাতেই দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করেন জেএন সুবুধি, আর কে বন্দ্যোপাধ্যায়, আর কে পঞ্জিরা এবং এ কে মোহান্ত – এই চার ঊর্ধ্বতন রেল কর্তা। তাঁদের মতে, ‘ভুল’ সঙ্কেতের কারণেই করমণ্ডল এক্সপ্রেস ঘুরে গিয়েছিল লুপ লাইনে। সেখানেই দাঁড়িয়েছিল পণ্যবাহী ট্রেনটি। আর তাতেই ঘটে গিয়েছে এত বড় দুর্ঘটনা। যার ফলে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯০০ জনের মত মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। যে যে লাইনে ট্রেনগুলির ধাক্কা লেগেছে, সেই লাইনগুলিও ‘আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে রেলের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টে।
এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বালেশ্বরের বাহানাগা বাজার রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাঠি এসেছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। প্রথমে সেটিকে মেইন লাইনে যাওয়ার জন্য সবুজ সংকেত দেখানো হয়েছিল। তবে, অবিলম্বে সেই সঙ্কেত প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি একটি লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল। ওই লুপ লাইনেই দাঁড়িয়ে ছিল একটি পণ্যবাহী ট্রেন। সেটির সঙ্গে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে এবং লাইনচ্যুত হয় করমণ্ডল এক্সপ্রেস। রেল স্টেশনের ঠিক বাইরে লুপ লাইনগুলি থাকে। মূল লাইন থেকে অন্য লাইনে কোনও ট্রেনকে সরাতে এই লুপ লাইন ব্যবহার করা হয়। কোনও ট্রেনকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দাঁড় করিয়ে রাখতে হলে বা অন্য কোনও ট্রেনকে ওভারটেক করার জন্যও এই লাইনগুলি ব্যবহৃত হয়। লুপ লাইন সাধারণত ৭৫০ মিটার দীর্ঘ হয়।
তবে, এই রিপোর্ট একেবারেই প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এই তিন ট্রেনের বিরল দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ রিপোর্ট, রেলওয়ে সিকিওরিটি কমিশনারের তদন্তের পরই প্রকাশ করা হবে। তবে, প্রাথমিক তদন্তেই জানা গিয়েছে, ওড়িশা ট্রেন দুর্ঘটনা যে রেললাইনগুলিতে ঘটেছে, সেগুলি ‘কবচ’ ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় ছিল না। এটি একটি দেশীয়ভাবে তৈরি স্বয়ংক্রিয় ট্রেন সুরক্ষা ব্যবস্থা। রিসার্চ ডিজাইনস অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অর্গানাইজেশন বা আরডিএসও (RDSO) এই রেল সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। ভুলবশতও যদি একই লাইনে দুটি ট্রেন এসে যায়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ট্রেন দুটি থামিয়ে দেয় এই কবচ সুরক্ষা ব্যবস্থা।