
নয়াদিল্লি: লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে আলোচনার প্রসঙ্গ বন্দে মাতরম্। বক্তৃতা শুরু হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে। জাতীয় গান রচনার সার্ধশতবর্ষে বাদ পড়া স্তবক থেকে জাতীয় সঙ্গীত করার পক্ষে ইঙ্গিতে সওয়াল তুলে দিলেন মোদী। কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন জওহারলাল নেহরুকে। আধার করলেন মাহাত্ম্য গান্ধীর মতামত।
১৮৭৫ সালে ‘বন্দে মাতরম্’ রচনা করেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়। স্বাধীনতার পটভূমিতে তৈরি এই গান ছিল বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম হাতিয়ার। ব্রিটিশরা দাগ কেটে দুই বাংলাকে আলাদা করে দিলেও, ঐক্য়ের সেতু হয়ে কাজ করেছিল ‘বন্দে মাতরম্’। সোমবার অধিবেশন চলাকালীন সেই কথাই মনে করিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, স্মরণ করিয়েছেন ‘বন্দে মাতরমে্র’ স্তবক মুছে যাওয়ার ঘটনাও।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, মুসলিম লিগ এই গানের বিরোধিতা করেছিল। আর ক্ষমতা পাওয়ার ‘লোভে’ এই মুসলিম লিগের কাছে মাথা ঝুঁকিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরু। মোদীর কথায়, ‘নেহরু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল বন্দে মাতরম্ মুসলিমদের প্ররোচিত করতে পারে।’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘এটা আসলেই বন্দে মাতরমে্র সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরমে্র গুরুত্বপূর্ণ দুই স্তবক বাদ দেওয়ার ঘটনা নিয়ে বরাবরই সরব বিজেপি। সম্প্রতি সাধশতবর্ষের অনুষ্ঠানেও এই বাদ পড়া স্তবক নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘দেশভাগের বীজ বপন হয়েছিল এই পর্বেই।’ সোমবার সংসদ কক্ষেও সেই কথা পুনরায় তুলে ধরেছেন মোদী।
এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি গান্ধীজির একটি লেখা তুলে ধরব। যেখানে বন্দে মারতম নিয়ে ওনার মত খুব স্পষ্ট। ১৯০৫ সালের ২ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রকাশিত ইন্ডিয়ান ওপিনিয়ন নামে এক সংবাদপত্রে গান্ধীজি লিখেছিলেন, এই গান বাংলায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে। হয়ে উঠেছে স্বদেশি আন্দোলনের হাতিয়ার।’
মোদীর সংযোজন, ‘সেই প্রতিবেদন গান্ধীজি লিখেছিলেন, এই গান এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যে মনে হচ্ছে, এটা আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। এই গান সত্যিই মহান। অন্য রাষ্ট্রগানের থেকে বেশি মধুর।’ প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, যে গানকে গান্ধীজি জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে দেখলেন, সেটির সঙ্গে কংগ্রেস কেন এমন ‘অন্যায় করল’? কেন ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হল? ‘বন্দে মাতরমে্র’ প্রতি একটা ‘অবিচার’ যে হয়েছে, সেই দাবিকেই সামনে রেখে ভাষণ দিলেন মোদী। এই গানের যে জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পূর্ণ রসদ ছিল, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন তিনি। যার নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।