ছবি - পঞ্চায়েতি রাজ দিবসে জম্মুতে মোদী
জম্মু: জম্মু সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা অবলুপ্তির পর এই প্রথম সে রাজ্যে গেলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষে এদিন তিনি জম্মুর সাম্বায় একটি জনসভায় যোগ দেন। সেখানেই তিনি দেশের গণতন্ত্র বজায় রাখতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। সভামঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কাশ্মীরের গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নতি হয়েছে। বহু বছর বাদে স্বাধীনতা পেয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ। বাবা আম্বেদকর আজ যদি থাকতেন, তবে অত্যন্ত গর্বিত বোধ করতেন।
Key Highlights
- ‘জম্মু-কাশ্মীর গরিব থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের সস্তায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। দেশের বিকাশের জয়যাত্রায় আজ বড় ছাপ রাখছে কাশ্মীর। আমি এখানে আসার আগে পঞ্চায়েতের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখনই আমি মানুষের জন্য তাদের কাজের প্রচেষ্টা দেখে মুগ্ধ। সকলের জন্য কাজ করার ইচ্ছা আদপে কী হয় তা কাশ্মীরের মানুষ করে দেখিয়েছে। এইবার পঞ্চায়েতি রাজ দিবস জম্মু-কাশ্মীরে পালিত হচ্ছে। এটা দেশের বুকে একটা বড় পরিবর্তনের প্রতীক। এটা খুবই গর্বের বিষয় যে আজ গণতন্ত্র জম্মু-কাশ্মীরে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে’।
- ‘কাশ্মীরে ৩০ হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি আজ মানুষের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। গণতন্ত্র হোক বা উন্নয়ন, আজ জম্মু-কাশ্মীর গোটা দেশের জন্য একটা নতুন উদাহরণ তৈরি করছে। এতদিন দেশের প্রায় ২০০-র বেশি আইন জম্মুতে প্রয়োগ হত না। ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে নেওয়ার পর তা করা গিয়েছে। এর জেরে এখানকার মহিলা থেকে শুরু করে গরিব, দলিত শ্রেণির মানুষেরা লাভবান হয়েছেন। আজ আমার গর্ব হয় কাশ্মীরের মানুষের জন্য’।
- জম্মু-কাশ্মীর হোক, লে-লাদাখ হোক, প্রতি জায়গা থেকেই একটা চেষ্টা চলছে যাতে সারা বছর দেশের প্রতিটা রাজ্যের সঙ্গে কাশ্মীরের যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থাকে। এখানের প্রতিটা গ্রামের উন্নতির জন্য আমাদের সরকার অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। এবারের বাজেটে ‘ভাইব্রেন্ট ভিলেজ’ প্রকল্পের জন্য আলাদা ভাবে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। যার সুবিধা দেশের প্রতিটা প্রত্যন্ত এলাকার গ্রামের পাশাপাশি কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী গ্রামের বাসিন্দারাও পাবেন। আজ জম্মু-কাশ্মীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশের’ একটা একটা বড় উদাহরণ হতে চলেছে’।
- ‘পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার সুফল সম্পর্কে আজ আমরা সবাই জানি। ভারতের গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু অনেকেই মুখে এই ব্যবস্থার বাস্তবায়ন চাইলেও কাশ্মীর যে পুরোপুরি সেদিক থেকে বঞ্চিত ছিল সেদিকে খেয়াল ছিল কারও। আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে’।
- রাজ্যে আধুনিক হাসপাতাল, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরির চেষ্টা করছে সরকার। শুধু মুখের কথায় নয় এখানকার যুব সমাজের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিটা প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। পুনরায় ‘বিকাশ ও বিশ্বাসের’ এই ফিরতি সময়ে কাশ্মীরে পর্যটন শিল্পও নয়া উদ্যোমে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ভাবমূর্তি ফিরছে গোটা উপত্যকার। আমি শুনেছি আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত এখানের সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলি বুক হয়ে গিয়েছে। ঘুরতে এলেও থাকার জায়গা পাওয়া সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছরে যত পর্যটক এখানে পা রাখেননি, প্রায় সেই সংখ্যাক মানুষ মাত্র বিগত কয়েক মাসে ফের এখানে ঘুরতে আসছেন। কাশ্মীরের এই ফিরে আসার কাহিনি ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
- আগামী বছর ১৫ অগস্টের মধ্যে প্রতি জেলায় কম করে হলেও ৭৫টি অমৃত সরোবর তৈরি করতে হবে। প্রতিটা সরোবরের পাশে গাছ লাগানোর উপর জোর দিতে অনুরোধ করব। প্রতিটা গাছ ওই এলাকার শহীদদের নামে বসাতে হবে। একইসঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে যখন এই অমৃত সরোবরগুলির শিলান্যাস করা হবে তখন তা যেন অবশ্যই এলাকার কোনও শহিদের পরিবারের সদস্যদের, কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের সদস্যদের হাত দিয়ে করতে হবে।
- দেশের সমস্ত পঞ্চায়েতের ক্ষমতা আরও বাড়াতে নানা প্রকল্প আনা হচ্ছে। হাতিয়ার করা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিকে। গ্রাম স্বরাজ অভিযানের হাত ধরে নানা নিত্য নতুন সম্ভবনার দরজা খোলা হচ্ছে। এখন গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের মোবাইল থেকে জানতে পারেন পঞ্চায়েতে কোন কোন কাজ হচ্ছে। ওই প্রকল্পে কত খরচ হচ্ছে তা যে কেউ দেখতে পারেন। যে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে তার অডিটের অনলাই ব্যবস্থা করা করা হয়েছে। জন্ম, বিয়ে থেকে শুরু করে সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনও শংসাপত্র এখন অনেক সহজে পঞ্চায়েতে গেলেই মেলে।
- পঞ্চায়েত কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। গ্রামের সমস্ত পরিবারের শিক্ষা, স্বাস্থ্যের উন্নতিই সরকারের মূল উদ্দেশ্য। গ্রামের উন্নতির জন্য আনা প্রতিটা সরকারি প্রকল্পের পরিকল্পনায় পঞ্চায়েতের ভূমিকা সবথেকে বেশি থাকুক এটাই আমরা চাই। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় মহিলাদের অংশগ্রহণ যাতে আরও বাড়ে সেই দিকটিও দেখছে সরকার। ভারতের মা-বোনের কী করতে পারে তা করোনাকালের সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতিতে গোটা বিশ্ব দেখেছে। করোনা টিকাকরণের সামগ্রিক ব্যবস্থা থেকে টিকাকরণ নিয়ে মানুষের মন থেকে আতঙ্ক দূরীকরণের ক্ষেত্রে আশা কর্মী,অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের অবদানের কথা মনে রেখেছে দেশ।