নয়া দিল্লি: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহতার মধ্যেই মঙ্গলবার আচমকাই দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় মিনিট ২০-র ভাষণের সংক্ষিপ্ত নির্যাস, কেন্দ্রীয় সরকার এখনই লকডাউনের কথা ভাবছে না। সেই সিদ্ধান্তভার কার্যত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারগুলির উপরই। লকডাউনকে একেবারে ‘শেষ বিকল্প’ হিসেবে ব্যবহার করা পরামর্শ এ দিন দিয়েছেন নমো। এ ছাড়াও বেশ কিছু আঙ্গিক ছিল তাঁর এ দিনের ভাষণের। দেশে যে অক্সিজেনের সমস্যা দেখা গিয়েছে সেই প্রসঙ্গও উঠে আসে মোদীর বক্তব্যে।
ভাষণের গোড়াতেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ একটি ঝড়ের মতো এসেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। যে হাজারো মানুষ এর ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন, প্রথা মেনে তাঁদের পরিবারের উদ্দেশে সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধাদেরও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
দেশে অক্সিজেনের সংকট সম্পর্কে তাঁকে বলতে শোনা যায়, অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে আমরা দ্রুত কাজ করছি। আমাদের প্রচেষ্টা, সবার কাছে যাতে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া যায়। আমাদের সামনে এ বারের চ্যালেঞ্জও বড়, তবে আমাদের আমাদের সংকল্প, সাহস এবং প্রস্তুতি নিয়ে একে পরাস্ত করতে হবে। সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, অক্সিজেন উৎপাদন এবং সরবরাহ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন স্তরে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করছি। রেলের মাধ্যমেও অক্সিজেন সরবরাহের কাজ চলছে।
ভারত টিকাকরণ কর্মসূচির দিক থেকে কতটা এগিয়ে রয়েছে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়ে মোদী বলেন, দু’টি ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ ভ্যাকসিন নিয়ে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম টিকা কর্মসূচি শুরু করে। এখন অবধি, ১২ কোটিরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব অল্প সময়ে, দিনরাত খেটে দেশবাসীর জন্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন। আজ, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা টিকা ভারতে পাওয়া যাচ্ছে।
গত বছরের লকডাউনের জেরে দেশের অর্থনীতির বুকে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তা এখনও সেরে ওঠেনি। সেই কারণে লকডাউনের কোনও প্রশ্নই এখন নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এ দিন কচিকাঁচাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। বলেন “আমি আমার ছোট বন্ধুদের একটা বিশেষ আবেদন জানাচ্ছি। সবাই নিজের পাড়া এবং তল্লাটে কমিটি গড়ে করোনা বিধির পালন করুক। বাড়িতেও এমন পরিবেশ তৈরি করুন যাতে প্রয়োজন ছাড়া কেউ না বেরোয়। লকডাউনের পরিস্থিতি তৈরিই যেন না হয়।” যদিও রাজ্যগুলিকে তাঁর পরামর্শ, লকডাউনকে যে একেবারে শেষ বিকল্প হিসাবে গণ্য করা হয়।
আরও পড়ুন: লকডাউন ‘শেষ অস্ত্র’, রাজ্যগুলিতে মাইক্রো কনটেনমেইন্ট জোনে জোর দেওয়ার আবেদন মোদীর
গতবছর লকডাউন জারি হওয়ার পর লাখো লাখো পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরার দৃশ্য এখনও জ্বলজ্বল করছে দেশবাসীর হৃদয়ে। এ বার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে। এই অবস্থায় যেন কোনও পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি না ফেরেন, সেই দায়িত্ব রাজ্য সরকারগুলিকেও নিতে বলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “গতবার এই নিয়ে আমাদের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু এতদিনে আমরা অনেক দিকেই এগিয়ে রয়েছি। তাই কোনও পরিযায়ী শ্রমিক যেন বাড়ি ফেরার কথা না ভাবেন, রাজ্য সরকারগুলিকেও এটা দেখতে হবে। তাঁরাও সময় মতো ভ্যাকসিন পাবেন।”
অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে ভ্যাকসিনের সংকট দেখা দিলেও আগামী সময়ে তা হবে না বলেই আশ্বাস দিতে শোনা গিয়েছে মোদীকে। দেশে যত সংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদন হচ্ছে, তার অর্ধেক দেশেই নানা রাজ্যগুলিতে সরবরাহ হব বলে জানিয়েছেন মোদী।
আরও পড়ুন: গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১০ হাজার আক্রান্ত বঙ্গে, মৃত্যু ৫০-এর কাছে, ভয়াল হচ্ছে পরিস্থিতি