কৃষক বৈঠকেও মমতাকে আক্রমণ, “রাজনৈতিক কারণেই চালু করছে না কিসান নিধি প্রকল্প”: মোদী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "গোটা দেশ এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। শুধু পশ্চিমবাংলা ছাড়া। সেখানের সরকার শুধুমাত্র নিজের রাজনৈতিক কারণে ওই সৃুবিধা চালু করছেন না।"

কৃষক বৈঠকেও মমতাকে আক্রমণ, রাজনৈতিক কারণেই চালু করছে না কিসান নিধি প্রকল্প: মোদী
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 25, 2020 | 11:26 PM

নয়া দিল্লি: বড়দিনে কৃষকদের ‘বড় উপহার’ দিতে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা দেশের কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরসারি পাঠিয়ে দেন এ দিন। আরও একবার কৃষি আইনের সুফল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন, কৃষকদের কোনওভাবেই এ সরকার ক্ষতি হতে দেবে না। তাঁর আশ্বাসের পাশপাশি, রাজনৈতিক আক্রমণও করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। বাংলাকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এ রাজ্যের কৃষকদের কেন্দ্রের প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া থেকে বঞ্চিত করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

এক নজরে জেনে নেওয়া যাক, কৃষকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী কী বললেন?

১. অরুণাচলের কৃষকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৈঠকে জানান, অরুণাচলে ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্প চালু আছে।

২. ওড়িশার কৃষকের সঙ্গে আলোচনা শুরু করলেন ‘জয় জগন্নাথ’ সম্বোধন করে। ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’র ভোক্তার সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। “কৃষক ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা বাড়ানো হোক। নিজের খেতের খরচ বাড়ান”, বললেন মোদী।

৩. হরিয়ানার কৃষকের সঙ্গেও কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী, কৃষিকাজ নিয়ে নানা প্রশ্নও করলেন।

৪. মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার কৃষক গণেশ ভোসলের সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। গণেশ ভোসলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তিন হেক্টর জমিতে সয়াবিন আর তুর ডালের চাষ করেন তিনি। পশুপালনের টাকা চাষে বিনিয়োগ করেন। ফসল বিমা যোজনার সঙ্গে যুক্ত। ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’তে ২৫৮০ টাকা প্রিমিয়াম ভরেন তিনি। পান ৫৪৫৮০ টাকা।

৫. মধ্যপ্রদেশের কৃষক মনোজ পাটিদা জানান, তিনি রবিশস্য, পেঁয়াজ, চানার চাষ করেন। ‘কিসান সম্মান নিধি’ তে পাঁচবার টাকা পেয়েছেন। যখন যেমন প্রয়োজন, সেই অনুযায়ী টাকা ব্যবহার করেছেন। নতুন বিকল্প এসেছে নয়া কৃষি আইনে । তিনি বলেন, “আইটিসি কোম্পানিকে আমি নিজে ৪১ কুইন্টাল সয়াবিন নিজে বিক্রি করেছি। টাকাও পেয়েছি। ফসলের যাবতীয় গুণমান ও ওজন পরীক্ষা আমাদের সামনেই হয়।”

৬. মালয়ালমে সম্বোধন করেন মোদী। চেন্নাইয়ের সুব্রহ্মণ্যম প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, “জলের সমস্যার কারণে চাষেও নানা অসুবিধা হচ্ছিল। ‘কিসান সম্মান নিধি’ যোজনার মাধ্যমে ৩ একর জমি থেকে ১লাখ ৩৩ হাজার টাকা আয় হয়েছে এবং বর্তমানে জলও সঞ্চয় হয়।”

৭. উত্তরপ্রদেশের শ্রীরাম গুলাব জানান, তাঁর ৫ একর জমি রয়েছে। ধান, গম, আখ, সবজির চাষ করেন। ১০০ জন মিলে দলবদ্ধ ভাবে কাজ করেন। আমেদাবাদের কোম্পানি তাঁদের ফসল কেনে।

৮. গীতার স্লোক উদ্ধৃত করে বলেন , “অটলজী জীবনের সার্থকতায় অনেক পদক্ষেপ করেছেন । অটলজি বলেছিলেন, “টাকা চলে, তো টাকা কার?”। ‘পিএম কিসান সম্মান নিধি’ এরই উদাহরণ । ১৮ হাজার কোটিরও বেশি টাকা কৃষকদের জন্য বরাদ্দ হল। ইতিমধ্যেই ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ কৃষকদের খাতে খরচ করা হয়েছে। এটাই গুড গভর্নেন্সের উদাহরণ।”

৯. সমস্ত নথি বিচার্যের পরই এই নিধি চালু হয়েছে। গোটা দেশ এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। শুধু পশ্চিমবাংলা ছাড়া । সেখানের সরকার শুধুমাত্র নিজের রাজনৈতিক কারণে ওই সৃুবিধা চালু করছেন না।

১০. যারা ৩০ বছর ধরে রাজত্ব করেছে, ১৫ বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলতেন, একবার শুনে নিন। কৃষকদের জন্য এত ভালবাসা, তবে কৃষকদের জন্য কী করেছেন? পঞ্জাবে এলেন , নিজের রাজ্য দেখুন। ৭০ লক্ষ কৃষক এই প্রকল্পের সুবিধা পেল না।আর আপনি এখানে এসে আন্দোলনে সমর্থন করছেন।

১১. দেশের লোক কি কিছুই বুঝছেনা! কিছু লোক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করছে। সেলফি তোলার জন্য , পেপারে ছবি তুলতে। স্বার্থপর রাজনৈতিকরা এই দলের অংশ, যারা বাংলাকে শেষ করেছে।

১২. কেরলের সরকারকে আক্রমণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেখানে এমপিএফসি চালু নেই। পঞ্জাবকে উত্তপ্ত করতে সময় আছে, আর ভাল কাজের সময় নেই। গণতন্ত্রে কেবল নিজেদের লাভ দেখেন।”

১৩. তিনি বলেন, “মিডিয়া আর সংবাদমাধ্যম নিজেদের জড়ুিবুটি খুঁজতে ব্যস্ত। রাজনীতিবিদরা ভোলাভালা কৃষকদের জীবনের নামে খেলবেন না। দীর্ঘসময় মসনদে বসেছিলেন আপনারা। আগে যে ফসল বিমা যোজনা ছিল, তার কোনও সুবিধাও পাননি ছোট কৃষকরা”।

১৪. গরিব কৃষক আরও গরিব হয়েছে। খালি উদাহরণ শুনে এসেছি। এই ইজরায়েলের, তো ওই অন্য দেশের। তাই সরকারে আসার পর চিন্তা প্রথম এল কীভাবে কৃষকদের খরচ কম হয়। একাধিক প্রকল্প চালু করেছি।

১৫. ৯০ হাজার কোটি প্রিমিয়াম পেয়েছেন কৃষকরা । সাধারণ মানের প্রিমিয়াম ভরতে হয় তাঁদের।

১৬. দেড় হাজারের বেশি কৃষক মান্ডিকে আমরা অনলাইনে সংযুক্ত করেছি।

১৭. কোল্ড স্টোরেজের জন্য সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করছে। মাছচাষ, পশুপালন, মধুচাষ সবেতেই পদক্ষেপ করেছে। ৭ লক্ষ টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। তা আজ ১৪ লাখ কোটিতে পরিণত হয়েছে। আড়াই হাজার লক্ষ কৃষক ‘কিসান ক্রেডিট কার্ড’-র পরিষেবা পাচ্ছেন।

১৮. সরকার কৃষকদের সঙ্গে সবসময় আছে। কৃষি আইন জারি হওয়ার কারণই হল,যাতে কৃষকদের পাশে আইনি ভাবে থাকা যায়। ভাল ফসল, বীজের চাহিদা বৃদ্ধি হবে। এতে কৃষকদেরই সুবিধা হবে। কোম্পানির সঙ্গে হওয়া এগ্রিমেন্ট কোম্পানি নিজে ভঙ্গ করতে পারবেনা। কিন্তু কৃষক চাইলে সেই চুক্তি ভাঙতে পারেন।

১৯. কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটির জন্য ভারতেই আসতে হবে সকল ব্যবসায়ীকে। কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক দল যাঁরা কৃষকদের ভুল বোঝাচ্ছেন ,যাঁরা কৃষকদের কাঁধে বন্দুক রেখে গুলি চালাচ্ছেন, তাঁরা দেখুন কীভাবে নিজেরা সময় অনুযায়ী রং বদলাচ্ছেন।

২০. এমএসপিতে নিজের ইচ্ছামত ফসল বেচতে পারবেন কৃষকরা। দেশের কোনও মান্ডি বন্ধ হয়নি। দিনে ৯০ পয়সার বিনিময়ে ৬০ বছর বয়সে ৩০ হাজার টাকা পেনশন পাবেন কৃষকরা। এছাড়া ফসল বিক্রির জন্য কৃষকরা বিকল্প মান্ডিও পাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ‘এনআরসি অসম্পূর্ণ, হিন্দুদের সুবিচার বাকি’, বিতর্ক উসকে দিলেন অসমের বিজেপি নেতা