PM Modi: ‘সাধারণের বোধগম্য করে তুলতে হবে আইন ব্যবস্থাকে’, মাতৃভাষা নিয়েও জোর সওয়াল প্রধানমন্ত্রীর
PM Narendra Modi at National Conference: দিল্লির বিজ্ঞানভবনে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি বলেন, "বিচারব্যবস্থা ও আইনসভার সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ।"
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে আয়োজিত যৌথ সম্মেলনে (National Conclave) দেশের বিচার ব্যবস্থাকে মজবুত করার পক্ষে সওয়াল করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)। এদিন দিল্লির বিজ্ঞানভবনে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বিচারব্যবস্থা যেখানে সংবিধানের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে, সেখানে আইনসভা নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে। আমার বিশ্বাস সংবিধানের এই দুটি বিভাগের সম্মিলিত ভারসাম্য আগামিদিনে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও সময়মাফিক ও কার্যকরী করে তুলবে।”
দিল্লিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের আইনজীবীরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান সহ একাধিক মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি তুলে ধরেন, তা হল-
- বিচারব্যবস্থা ও আইনসভার মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজাদির অমৃত মহোৎসবের মাঝে এই বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। আমার মতে, ন্যায় ও বিচার ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত, যা সর্বসাধারণের জন্য সমান হবে এবং সকলেই এই বিচারের সমান সুযোগ পাবেন।
- সরকার বিচার ব্যবস্থা ও পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। মামলার বোঝা কমানোর জন্য কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে নতুন পদ্ধতি সহ একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
- বর্তমান যুগে প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের বিচারব্যবস্থাতেও প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করা হয়েছে। আমি সকল বিচারপতিকেই অনুরোধ করছি যে এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। আগে ডিজিটাল লেনদেনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হত না। বর্তমানে বিশ্বে অনলাইন লেনদেনকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম একটি দেশ হল ভারত। হাতের মুঠোয় থাকা মোবাইলের মাধ্য়মে যাবতীয় লেনদেন সম্ভব হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থাতেও এই ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
- আমাদের যুব সম্প্রদায়ের জীবনের অংশ প্রযুক্তি। এটা যাতে তাদের কর্মদক্ষতায় পরিণত হয়, তার জন্য মিলিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়াতে হবে।
- ন্যায় ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে জড়িত থাকতে হবে। সাধারণ মানুষ যাতে বিচার ব্যবস্থাকে বুঝতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন দেশে এমনভাবে আইন তৈরি করা হয়, যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন। আমার মতে, আইন এমন ভাষায় লেখা হোক যাতে সাধারণ মানুষও বুঝতে পারেন।
- আমাদের দেশের বিচার পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে ইংরেজিতে পরিচালিত হয়। একাধিক রাজ্যেই প্রযুক্তিগত শিক্ষা মাতৃভাষায় পড়ানো শুরু হয়েছে। আমাদের অনেক পড়ুয়াই বিদেশে যান মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। সেখানে যেমন তাঁরা অন্য ভাষায় পড়াশোনা করেন, তবে আমাদের দেশে কেন মাতৃভাষায় চিকিৎসা বা প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে না? যদি মাতৃভাষায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়, তবে প্রত্যন্ত গ্রামের পড়ুয়াদেরও উচ্চশিক্ষায় কোনও রকম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে না।
- ২০১৫ সালে আমরা প্রায় ১৮০০ এমন আইনকে চিহ্নিত করি, যা বর্তমান সময়ে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের অধীনে থাকা এই ধরনের ১৪৫০টি আইনকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে রাজ্যের তরফে মাত্র ৭৫টি আইন অবলুপ্ত করা হয়েছে।
- দেশে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বন্দি রয়েছেন, যাঁদের এখনও বিচার প্রক্রিয়া চলছে এবং তাঁরা জেলে রয়েছেন। এদের মধ্য়ে অধিকাংশই অত্যন্ত গরিব বা সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন। প্রতিটি জেলাতেই এমন একটি কমিটি রয়েছে, যার পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন একজন বিচারক। আমার অনুরোধ, তাঁরা যেন মধ্যস্থতা করেন এবং সম্ভব হলে জামিনের ব্যবস্থা করেন। আমি সকল বিচারপতি ও মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে অনুরোধ করছি তাঁরা যেন এই বিষয়টি মানবিক সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিচার করে দেখেন।