G-20 Summit: মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও সামিটের ডিউটিতে অটল, পুলিশকর্মীর অভিজ্ঞতা শুনে স্যালুট জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী

PM Narendra Modi: শুক্রবার দিল্লিতে জি-২০ সামিটের আয়োজকদের জন্য সরকারের তরফে বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেই নৈশভোজে যোগদান করেন এবং ওই আয়োজকদের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। তারপর এই সাফল্য তাঁদেরই প্রাপ্য বলে সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।

G-20 Summit: মায়ের মৃত্যুর খবর শুনেও সামিটের ডিউটিতে অটল, পুলিশকর্মীর অভিজ্ঞতা শুনে স্যালুট জানালেন প্রধানমন্ত্রী মোদী
জি-২০ সামিটের আয়োজকদের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দিয়ে সকলকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

| Edited By: Sukla Bhattacharjee

Sep 23, 2023 | 9:28 PM

নয়া দিল্লি: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে জি-২০ সামিট (G-20 Summit) সফল হয়েছে বলে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা। তবে এই সাফল্যের কৃতিত্ব জি-২০-র আয়োজনে নিযুক্তি আধিকারিক থেকে বিভিন্ন পদের কর্মীদেরই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেননা এই সামিটকে সফল করার লক্ষ্যে সরকারি আধিকারিক, পুলিশকর্মী, জওয়ান থেকে গাড়িচালক-সহ অধস্তন কর্মীরাও দিনরাত এক করে নিরলস পরিশ্রম করে গিয়েছেন। বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়নে কেউ বাঁ-হাতের স্টিয়ারিংয়ের গাড়ি চালানো শিখেছেন, তো কেউ অ্যাপের মাধ্যমে ভাষা অনুবাদ করে বিদেশি অতিথির প্রয়োজন মিটিয়েছেন। আবার কেউ মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েও দেশকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামিটের ডিউটিতে অটল থেকেছেন। জি-২০ সামিটের আয়োজকদের সঙ্গে নৈশভোজে কর্মী-আধিকারিকদের এই সমস্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁদের স্যালুটও জানান প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)।

বিদেশি অতিথিদের আপ্যায়নে যাতে কোনও ত্রুটি না হয়, তার জন্য জি-২০ সামিটের আয়োজকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। বিশেষত, পুলিশ, সিআরপিএফ জওয়ান, গাড়িচালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরকমই এক সিআরপিএফ কর্মী তাঁর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। সিআরপিএফের ২৪৪ ব্যাটেলিয়নের সদস্য, আচ্চার সিং গাড়িচালক হিসাবে হিমাচল প্রদেশে নিযুক্ত। তিনি জানান, সামিটের আগে নয়ডায় তাঁদের দু-মাসের ট্রেনিং হয়েছে। সেই সময় তিনি বাঁ-দিকের স্টিয়ারিংয়ের গাড়ি চালানো শেখেন। তারপর সামিটে মেক্সিকোর প্রতিনিধির গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছিলেন। সামিটের আগের দিন থেকে টানা ৩ দিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন এবং বাঁ হাতের স্টিয়ারিংয়ের গাড়ি চালিয়েছেন আচ্চার সিং। এটা তাঁর কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা বলেই মনে করেন আচ্চার সিং। এপ্রসঙ্গে সামিটের আয়োজক থেকে প্ল্যানারদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “একটা বড় অনুষ্ঠান করার জন্য কতদূর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হয়, তা এর থেকে কিছুটা বোঝা যাচ্ছে।”

আবার হরিয়ানা পুলিশে কর্মরত পিঙ্কি রানিও জি-২০ সামিটের আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন। তিনি জানান, সামিটের সময় তুরস্কের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে তাঁর ডিউটি পড়েছিল। তুরস্কের ফার্স্ট লেডি শাড়ির দোকানে গিয়ে কাপড় স্পর্শ করে সেই সম্পর্কে জানতে চাইছিলেন। উনি তুর্কি ভাষায় কথা বলছিলেন, হিন্দি জানতেন না। আর পিঙ্কি তুর্কি ভাষা জানতেন না। তখন তিনি জি-২০ অ্যাপের সাহায্যে ভাষা অনুবাদ করে তুরস্কের ফার্স্ট লেডির বক্তব্যের সারমর্ম বোঝেন এবং দোকানদারকে বোঝাতে সমর্থ হন। এছাড়া তুরস্কের ফার্স্ট লেডির অন্যান্য কথাও তিনি ওই ভাবে বোঝেন এবং তাঁর চাহিদা পূরণ করেন। যা দেখে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে জানান পিঙ্কি। এপ্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, আমাদের কাছে যে ক্ষমতা আছে, তা দুনিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে।

আবার জি-২০ সামিটকে সফল করতে নিরলস পরিশ্রমের এক উদাহরণ তুলে ধরেন এনডিএমসি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণ কুমার নামে এক সরকারি আধিকারিক। তিনি জানান, সামিট শুরুর আগের রাতে ৩টে নাগাদ ঘরে পৌঁছন। ঘরে ঢোকার জন্য দরজায় সবে বেল বাজিয়েছেন, তখনই তাঁর জরুরি ফোন আসে এবং আবার তিনি ছুটে চলে আসেন। তাঁর মা প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে তাঁকে উৎসাহ দেন। প্রবীণ কুমার বলেন, “মা বলেন, বেটা এই সময় জান লাগিয়ে পরিশ্রম কর। দেশের নাম ছোট না হয়। প্রয়োজন হয় তো ওখানে ৩-৪ দিন থেকে যাও।” একইভাবে আরেক সরকারি আধিকারিক রবীন্দ্র ত্যাগীও পরিবারের কাছ থেকে বিশেষ সমর্থন পেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “জি-২০ সামিটের জন্য ৮, ৯, ১০ সেপ্টেম্বর দেরিতে বাড়ি আসব বলে স্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। সেকথা শুনে স্ত্রীর জবাব ছিল, দেরিতে আসবে কেন, প্রয়োজন হবে। তিনদিন ওখানে থাক। আমি গর্বিত, তুমি জি-২০ আয়োজনের একটা অংশ। এটা দেশের প্রশ্ন।” রবীন্দ্র ত্যাগীর স্ত্রীর একথা শুনে অভিভূত হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আবার ব্যক্তিগত জীবনে কঠিন সময়ের মধ্যেও দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন ইন্সপেক্টর সুরেশ কুমার। তিনি বলেন, “জি-২০ সামিটে ভারত মণ্ডপম-এ ডিউটি ছিল। এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজনে রয়েছি, খুব ভাল অনুভব হচ্ছিল। ৯ সেপ্টেম্বর রাতে যখন ডিউটি দিচ্ছি, তখন ফোন আসে, আমার মায়ের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এবং হাসপাতালে তিনি মারা যান। একথা শুনে একবার মনে হয়েছিল, আমি ছুটে সেখানে চলে যাই। কিন্তু, তারপরই মনে হয়েছে, এই সামিটের সঙ্গে গোটা দেশের গৌরব জুড়ে। এখানে বড় দায়িত্বে আমি রয়েছি। তখন মনকে শক্ত করে আমি ডিউটি দিই।”

ইন্সপেক্টর সুরেশ কুমারের এই অভিজ্ঞতার কথা শুনে অভিভূত হয়ে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে স্যালুট জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনি অনেক কঠিন সময়ে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনি দেশের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ব্যক্তিগত স্তরে এত বড় ঘটনার পরেও ডিউটির জন্য নিজেকে সমর্পিত করেছেন। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, স্যালুট।”

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লিতে জি-২০ সামিটের আয়োজকদের জন্য সরকারের তরফে বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেই নৈশভোজে যোগদান করেন এবং ওই আয়োজকদের অভিজ্ঞতার কথা শোনেন। তারপর এই সাফল্য তাঁদেরই প্রাপ্য বলে সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী।