পুদুচেরি: দু’মাসের জন্য মসনদ সামলানোর পক্ষে নয় বিজেপি (BJP)। তাই রাষ্ট্রপতি শাসনের পথেই হাঁটছিল পুদুচেরি (Puducherry)। ক্যাবিনেট বৈঠকেও স্থির হয়েছিল রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে। সেই মতোই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাতে বর্তাতে চলেছে পুদুচেরির শাসনভার। একাধিক বিধায়কের ইস্তফার জেরে আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হন মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী। চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।
বুধবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর (Prakash Javadekar) বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের পর কোনও রাজনৈতিক দলই সরকার গঠনের ইচ্ছে প্রকাশ না করায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপ-রাজ্যপালও রাষ্ট্রপতি শাসনের সপক্ষেই মত দিয়েছেন। সেই অনুযায়ীই মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
পদত্যাগ করার আগে বিজেপি ও এনআর কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই সরকার ফেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন ভি নারায়ণস্বামী। প্রাক্তন উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদীর বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করার অভিযোগ করেন তিনি। পদত্যাগ করার আগে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রাক্তন উপ রাজ্যপাল কিরণ বেদী ও কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। আমাদের বিধায়করা একজোট থাকাতে বিগত পাঁচবছর সরকার চালানো সম্ভব হয়েছে। প্রাপ্য বকেয়া তহবিলের অর্থ না দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পুদুচেরির মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।”
পুদুচেরিতে বিধানসভায় মোট আসন সংখ্যা ৩৩। এরমধ্যে তিনটি আসনে রয়েছেন কেন্দ্র মনোনীত প্রার্থীরা। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ৩০টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস মোট ১৫টিতে জয়লাভ করে। তাঁদের জোটসঙ্গী ডিএমকে-র ঝুলিতে যায় ২টি আসন। এক নির্দল বিধায়ককে নিয়ে মোট ১৮টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে কংগ্রেসের জোট। তবে গতবছর দলবিরোধী কার্যকলাপের জন্য এক কংগ্রেস বিধায়ককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলির মধ্যে এনআর কংগ্রেস মোট আটটি আসনে জিতেছিল। এআইএডিএমকে-র দখলে ছিল তিনটি আসন। বিজেপি নির্বাচনে কোনও আসন না পেলেও মনোনীত তিনটি আসনের বিধায়করা আদপে বিজেপির সদস্য। ২০১৯ সালে আয় বহির্ভূত সম্পত্তি মামলায় এনআর কংগ্রেসের এক বিধায়ককে বিতাড়িত করা হয়। ২০১৯ সালে সেই উপনির্বাচনে এই আসন দখল করে ডিএমকে, ফলে তাদের আসন সংখ্যা বেড়ে তিন হয়।
এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে পদত্যাগের পালা শুরু হয়। প্রথম ধাপে দুই ভাগে মোট কংগ্রেসের চার বিধায়ক পদত্য়াগ করেন। ফলে শাসক জোটের আসন সংখ্যা কমে ১৪-এ পৌঁছয়। শাসক ও বিরোধী দল-উভয়ের আসন সংখ্যা ১৪-এ পরিণত হওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে সরকার, এমনটাই দাবি তোলে বিরোধী দল। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও করে বিজেপি (BJP)। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এগুলি বিরোধী দলের চক্রান্ত।”
এরই মাঝে উপ-রাজ্যপাল কিরণ বেদী (Kiran Bedi)-কে রাতারাতি অপসারিত করে তেলাঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সুন্দররাজনকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়। বুধবার দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই তিনি আস্থাভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেন। আস্থা ভোটের আগেই বিকেলে নতুন করে আরও দুই বিধায়ক পদত্যাগ করেন। ফলে বিধানসভায় শাসক দলের আসন সংখ্যা ১৪ থেকে কমে ১২-এ দাঁড়ায়। সংখ্যালঘু হয় কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: ‘৫ বছরে ৩৫ বার এসেছেন প্রধানমন্ত্রী’, বিরোধীদের কটাক্ষের কড়া জবাব শাহের