নয়া দিল্লি: জটিল কোনও রোগই হোক বা দুরারোগ্য, সঠিক চিকিৎসার জন্য অনেকেই চোখ বন্ধ করে ভরসা করেন অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স বা এইমসের উপরে। দেশের অন্যতম সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এইমস। এর মধ্যে সবথেকে বড় ও বিখ্যাত হল দিল্লির এইমস। এছাড়াও উত্তরাখণ্ডের দেহরাদুন থেকে বিহারের পটনা- দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে এইমস। দেশের সেরা এই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পিছনের ইতিহাস জানেন? এক রাজকন্যার উদ্য়োগেই তৈরি হয়েছিল অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স। কে তিনি?
দেশের প্রথম মহিলা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন অমৃত কৌর। তাঁর উদ্যোগেই তৈরি হয়েছিল দেশের সবথেকে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। তবে তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে। অমৃত কৌর ছিলেন পঞ্জাবের কাপুরথালার রাজকুমারী। ১৮৮৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি লখনউয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন কাপুরথালার রাজা, মহারাজ হরনাম সিং আলুওয়ালিয়া। ব্রিটিশরা তাঁকে ‘স্যর’ উপাধি দিয়েছিলেন।
রাজগদি নিয়ে বিরোধ শুরু হতেই হরনাম সিং পঞ্জাব থেকে উত্তর প্রদেশের লখনউয়ে চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রিস্টান হন। তাঁর সঙ্গে ছিল বাংলার যোগও। পশ্চিমবঙ্গের মেয়েকেই বিয়ে করেন তিনি। গোকুলনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা প্রিসিলাকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের নয়টি পুত্র ছিল, দশম সন্তান তথা একমাত্র কন্যা ছিলেন অমৃত কৌর।
সেই যুগে দাঁড়িয়েও রাজা হরনাম সিং মেয়েকে বিদেশে পড়াতে পাঠিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডের শিরবার্ন স্কুল থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। এরপরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন। ১৯০৮ সালে তিনি পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন।
মহাত্মা গান্ধীর রাজনৈতিক গুরু গোপাল কৃষ্ণ গোখলের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়ে রাজকুমারী অমৃত কৌর। ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাধীনতা সংগ্রামে। পরবর্তী সময়ে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁর ভক্ত হয়ে ওঠেন। অংশ নিয়েছিলেন ডান্ডি অভিযান। জেলেও যান রাজকুমারী। মা-বাবার মৃত্যুর পর, ১৯৩০ সালে তিনি রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করে পুরোপুরি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।
কংগ্রেস সরকার গঠনের পর, ১৯৫৬ সালে প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন অমৃত কৌর। সেই সময়ই তিনি দেশে বড় মাপের হাসপাতাল তৈরি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সকলে এই চিন্তাভাবনার প্রশংসা করলেও, হাসপাতাল নির্মাণে বিপুল ব্যয় নিয়ে ভ্রু কুঁচকে ছিলেন। রাজকুমারী নিজেই অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। শুধুমাত্র দেশেই নয়স আমেরিকা, সুইডেন, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকেও ব্যক্তিগতভাবে অর্থ সংগ্রহ করেন।
তহবিল জোগাড় হলেও, কোথায় হাসপাতাল তৈরি হবে, তা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল। এই সময়ে রাজকুমারী নিজের সিমলার প্রাসাদ দান করে দেন এইমস হাসপাতাল তৈরির জন্য। ১৯৫৬ সালের মে মাসে সংসদের উভয় কক্ষেই প্রস্তাবনা পাশ হয় এবং এইমসের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়।
শুধু এইমস নয়, পাতিয়ালায় জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার ভিত্তিও স্থাপন করেছিলেন তিনি। তিনিই এশিয়ার প্রথম মহিলা ছিলেন, যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদের প্রধান হন।