
কথায় বলে কঠিন অধ্যাবসায় না থাকলে কোনও কিছুতেই সফল হওয়া যায় না। কিন্তু তাই বলে ১৭০ ঘন্টা ধরে নাচ? এও সম্ভব? শুনতে অবাক লাগলেও, ঘটেছে এমনটাই। ম্যাঙ্গালোরের বাসিন্দা রেমোনা ইভেট পেরেইরা। টানা ৭ দিন ধরে ভরতনাট্যম নেচে গড়লেন বিশ্ব রেকর্ড। ১৭০ ঘণ্টা ধরে অবিরাম ভরতনাট্যম পরিবেশন করে নিজের নাম তুললেন গোল্ডেন বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
সেন্ট অ্যালোইসিয়াস বা ডিমড টু বি ইউনিভার্সিটির , ম্যাঙ্গালোরের চূড়ান্ত বর্ষের বিএ ছাত্রী রেমোনা ইভেট পেরেইরা। এই বয়সে অনেকেই নিজের কেরিয়ারে কী করবেন তাই ঠিক করে উঠতে পারেন না। সেখানেই বিশ্বের প্রথম নৃত্যশিল্পী হিসাবে টানা ১৭০ ঘণ্টা ভরতনাট্যম পরিবেশন করে চমকে দিয়েছেন রেমোনা।
এই রেকর্ড-ভাঙা পারফরম্যান্স শুরু হয়েছিল ২১ জুলাই এবং শেষ হয় ২৮ জুলাই। এর আগে ২০২৩ সালে ১৬ বছর বয়সী সুধীর জগপথ ১২৭ ঘণ্টা নাচ করে রেকর্ড তৈরি করেছিলেন। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন রেমোনা।
রেমোনার এই অসাধারণ কীর্তি তার অদম্য মানসিক শক্তি, সহনশীলতা ও শৃঙ্খলার নিদর্শন। প্রাণ মন দিয়ে যখন ৭দুন ধরে অবিরাম নেচে চলেছেন রেমোনা,তখন দর্শকাসনে তাঁর সাফল্য কামনায় বসে বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী। রেকর্ড ছোঁয়ার মুহূর্তে আনন্দে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে গোটা হল।
রেমোনা গত ১৩ বছর ধরে ইয়েয়াডির গুরু শ্রী বিদ্যার কাছে ভরতনাট্যমে তালিম নিচ্ছেন। রেকর্ড ভাঙা এই পারফরম্যান্সেই সঙ্গেই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের পড়াশোনা। প্রতিদিন কলেজে যাওয়ার আগে ও পরে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করতেন কঠোর অনুশীলন। শুধু বিশ্ব রেকর্ড নয়, ঝুলিতে আছে আরও পুরষ্কার। তাঁর নিষ্ঠা ও শ্রমের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় বাল পুরস্কার (Pradhan Mantri Rashtriya Bal Puraskar) প্রদান করা হয়।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাঙ্গা আধ্যাত্মিক কেন্দ্রের পরিচালক ক্রিস্টোফার ডি’সুজা জানান, রেমোনাকে প্রতি তিন ঘণ্টায় মাত্র ১৫ মিনিটের বিরতি নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
শুধু ভরতনাট্যম নয়, রেমোনা সেমি-ক্লাসিক্যাল, ওয়েস্টার্ন ও কনটেম্পোরারি নৃত্যশৈলীতেও সমান দক্ষ। এর আগেও তিনি ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডস, গোল্ডেন বুক অব রেকর্ডস (লন্ডন), এবং ভারত বুক অব রেকর্ডস (২০১৭)-এ নাম তুলেছেন।
এই ১৭০ ঘণ্টার পারফরম্যান্সের সব নথিপত্র ইতিমধ্যেই গোল্ডেন বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এর অফিসিয়াল স্বীকৃতির জন্য পাঠানো হয়েছে। রেমোনার এই কৃতিত্ব ম্যাঙ্গালুরুর সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক মহলে গর্বের মুহূর্ত। তরুণ শিল্পীদের জন্য এক দৃষ্টান্ত এবং অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন রেমোনা।