
চেন্নাই: কোনও স্ত্রীর মঙ্গলসূত্র খুলে রাখা স্বামীকে সর্বোচ্চ মানসিক নির্যাতন করার সমান! সম্প্রতি এক বিবাহ বিচ্ছেদের মামলায় এমনই তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করল মাদ্রাজ হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ। সি শিবকুমার নামে চেন্নাইয়ের ইরোড এলাকার এক মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেছিলেন। রায় ঘোষণার সময় এই পর্যবেক্ষণ করে এবং তাঁর আবেদন মেনে নিয়ে বিচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি ভিএম ভেলুমনি এবং এস সাউন্থারের ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে ২০১৬ সালে ওই অধ্যাপকের বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল এক স্থানীয় পারিবারিক আদালত।
অধ্যাপক সি শিবকুমারের অভিযোগ ছিল, আদালতের নির্দেশে যখন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী আলাদা থাকছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলেছিলেন। এতে তিনি তীব্র মানসিক আঘাত পেয়েছেন। এছাড়া, তাঁর সঙ্গে তাঁর এক সহকর্মীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে বলেও সন্দেহ করেন তাঁর স্ত্রী। এই ঘটনাও তাঁর মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়েছে। তাই তিনি বিচ্ছেদ চান। তাঁর স্ত্রীও আদালতে স্বীকার করেছেন বিচ্ছিন্নভাবে থাকার সময় তিনি মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলেছিলেন। তবে, সেটি তিনি যত্ন করে ব্যাঙ্কের লকারে রেখে দিয়েছিলেন। তাঁর আইনজীবী হিন্দু বিবাহ আইনের ধারা উল্লেখ করে যুক্তি দেন, মঙ্গলসূত্র বাঁধা হিন্দু বিবাহের ক্ষেত্রে আবশ্যক আচার নয়। তাই স্ত্রী সেটি খুলে ফেললে বৈবাহিক বন্ধনে তার কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়।
আদালত অবশ্য তাঁর যুক্ত মানেনি। বিশ্বের এই প্রান্তে বিবাহের ক্ষেত্রে মঙ্গলসূত্র বাঁধা একটি অপরিহার্য আচার, এটা ‘সাধারণ জ্ঞানের বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছে মাদ্রাজ হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। স্ত্রী নিজেই মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলার খতা স্বীকার করেছেন উল্লেখ করে ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, ‘মঙ্গলসূত্র একটি পবিত্র জিনিস। এটা বিবাহিত জীবনের ধারাবাহিকতার প্রতীক। শুধুমাত্র স্বামীর মৃত্যু হলেই কোনও স্ত্রী মঙ্গলূত্র খোলেন। তাই, এটা খুলে ফেলার একটা মানসিক প্রভাব থাকে। সর্বোচ্চ মানের মানসিক নির্যাতনের কারণ হতে পারে এবং স্বামীর অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে’।
মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলার পাশাপাশি, স্বামীর চরিত্রকে সন্দেহ করেও তিনি তাঁর স্বামীকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে জানিয়েছে আদালত। এরপরই আদালত বলে, ‘আমরা একবারও বলছি না যে, মঙ্গলসূত্র খুলে ফেলাই বৈবাহিক সম্পর্কের অবসান ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। তবে স্ত্রীর উল্লিখিত এই কাজটি এবং রেকর্ডে উপলব্ধ অন্যান্য বিভিন্ন প্রমাণ আমাদেরকে এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য করেছে যে, কোনও পক্ষেরই পুনর্মিলন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই।’ এরপরই নিম্ন আদালতের আদেশকে খারিজ করে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করে হাইকোর্ট।