হায়দরাবাদ: সব জল্পনার অবসান। প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান রেবন্ত রেড্ডিই তেলঙ্গানার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায়, সরকারিভাবে এই ঘোষণা করল কংগ্রেস হাইকমান্ড। সূত্রের খবর, এদিন হায়দরাবাদে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠকে, তেলঙ্গানার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে ঐক্যমত হতে পারেননি বিধায়করা। তবে, সিংহভাগ বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রেবন্ত রেড্ডিকেই দেখতে চেয়েছিলেন। এরপর, মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দলের হাইকমান্ডের উপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তেলঙ্গানায় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক জয়ের পিছনে রেবন্ত রেড্ডির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। শেষ পর্যন্ত তাঁর হাতেই আগামী ৫ বছরের জন্য রাজ্য শাসনের দায়িত্ব তুলে দিল হাইকমান্ড।
সূত্রের খবর, উত্তম কুমার রেড্ডি, শ্রীধর বাবু, মাল্লু ভাট্টি বিক্রমার্কা, কোমাতিরেড্ডি ভাইদের মতো রাজ্যের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতারা রেবন্তকে মুখ্যমন্ত্রী করার বিরোধিতা করেছিলেন। আসলে এই নেতারা নিজেরাই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দাবিদার ছিলেন। বিশেষ করে উত্তম কুমার রেড্ডি প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান এবং মাল্লু ভাট্টি বিক্রমার্কা দলিত নেতা হওয়ায়, তারা দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন। তবে, অধিকাংশ জয়ী বিধায়ক রেবন্তকেই সমর্থন করেন। এদিন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গের বাসভবনে এক বৈঠক করেন কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল, তেলঙ্গানার দায়িত্ব প্রাপ্ত কংগ্রেস নেতা মাণিকরাও ঠাকরে প্রমুখ।
সূত্রের খবর, সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে দুইজনকে উপমুখ্যমন্ত্রী করতে পারে কংগ্রেস। উত্তম কুমার রেড্ডি এবং ভাট্টি বিক্রমার্কা উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। অন্যথায় তাঁদের মন্ত্রিসভায় ভাল দফতর দেওয়া হতে পারে। তবে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী করার কোনও চিন্তাভাবনা নেই। এর আগে কর্নাটকেও সিদ্দারামাইয়াকে মুখ্যমন্ত্রী করে শিবকুমারকে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছিল। তবে সূত্রের খবর, আড়াই বছর পর সিদ্দারামাইয়ার জায়গায় শিবকুমারকে মুখ্যমন্ত্রী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে হাইকমান্ড। শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না ঘটলে, বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় তেলঙ্গানার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন রেবন্ত রেড্ডি। তাঁর সঙ্গেই শপথ নিতে পারেন, দুই উপমুখ্যমন্ত্রী এবং আরও কয়েকজন মন্ত্রী।
তেলঙ্গানার রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মালকাজগিরির সাংসদ রেবন্ত রেড্ডি। ২০১৭ সালে তিনি চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম পার্টি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। তেলঙ্গানা কংগ্রেসের মুখ হিসেবে, সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-কে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন রেবন্ত রেড্ডি। পুরো প্রচার পর্ব জুড়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এই সকল পদক্ষেপ রাজ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়িয়েছে। নির্বাচনের আগে যে কটি জনমত সমীক্ষা হয়েছে, সবগুলিতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জনগণের এক নম্বর পছন্দ ছিলেন তিনি। নির্বাচনে ১১৯ সদস্যের বিধানসভায় ৬৪টি আসনে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। আর কে চন্দ্রশেখর রাও-এর ভারত রাষ্ট্র সমিতি জিতেছে ৩৯টি আসন। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কেসিআর।