জমি বিতর্কের জেরে সংঘের হাতে রাম মন্দির নির্মাণের ‘অঘোষিত’ দায়িত্ব, আসন্ন নির্বাচনেও পড়বে প্রভাব!

RSS on Ram Mandir: এখনও পর্যন্ত অযোধ্যাতে মন্দির নির্মাণের জন্য ৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে অনুমানিক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জমি বিতর্কের জেরে সংঘের হাতে রাম মন্দির নির্মাণের 'অঘোষিত' দায়িত্ব, আসন্ন নির্বাচনেও পড়বে প্রভাব!
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 01, 2021 | 6:17 PM

জ্যোতির্ময় রায়: অযোধ্যার শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দির (Ram Mandir) প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক উঠে আসার পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নেমেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS)। শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দিরের জমি কেনা ঘিরে আরও জল ঘোলা হতে পারে, সেই ভয়েই মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের যাবতীয় দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছে আরএসএস।

মন্দিরের জমি কেনা নিয়ে অনিয়মের খবর প্রকাশ হওয়ার পরেই সংঘের ভাইয়াজী জোশির হাতে সমগ্র বিষয়টি তদারক করার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। সংঘের শীর্ষ নেতৃত্ব রামের মন্দির নির্মাণ সম্পর্কিত প্রকল্পে কোনও প্রকার বিবাদ বা বিতর্ক চান না। তাই এবার থেকে আরএসএস-এর পূর্ব সরকার্যবাহ ভাইয়াজী জোশীই মন্দির প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ এখন থেকে পুরো প্রকল্পটিই ভাইয়াজী জোশীর তত্ত্বাবধানে চলবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা না করা হলেও, আপাতত এই সিদ্ধান্তেই মন্দিরের নির্মাণ কাজ চলবে। ভাইয়াজী জোশী একজন কঠোর অনুশাসক, সুপ্রশাসক, কর্তব্যপরায়ণ, নিষ্ঠাবান, ধর্মনিষ্ঠ ও সৎ স্বয়ং সেবক হিসাবেই সংঘে পরিচিত।

আনুষ্ঠানিকভাবে অযোধ্যার রাম মন্দির নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করছে রাম জন্মভূমি তীর্থ ট্রাস্ট, যার সম্পাদক হলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রধান চম্পত রাই। এখনও পর্যন্ত অযোধ্যাতে মন্দির নির্মাণের জন্য ৩,০০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে অনুমানিক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাম মন্দির নির্মাণের পাশাপাশি পুরো অযোধ্যা শহরকেও নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাস্টের।

উল্লেখ্য, আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং সম্প্রতিই অভিযোগ করেন যে মন্দির নির্মাণের জন্য রাম জন্মভূমি তীর্থ ট্রাস্ট ২ কোটি টাকার জমিই ১৮ কোটি টাকায় কিনেছে। এরপর আরও কয়েকজন ছোট ছোট জমি কেনার ক্ষেত্রেও ট্রাস্টের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করেছেন।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। বিজেপির অবস্থান শক্তিশালী করতে আরএসএস ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশব প্রসাদ মৌর্যর মধ্যেও কোন্দল সর্ববিদিত। তাছাড়া, রাজ্যে বিজেপির দলিত ভোট ব্যাংকের উপর শ্রীরাম জন্মভূমি মন্দির নির্মাণের প্রভাবও অস্বীকার করা যায় না।

ভারতের রাজনীতিতে উত্তরপ্রদেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। মোট লোকসভা সদস্যর ১৫.১৮ শতাংশই প্রতিনিধিত্ব করে উত্তরপ্রদেশ। ২০২২ সালের রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেই কারণেই প্রতিটি রাজনৈতিক দলই উত্তরপ্রদেশের এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সংঘের নতুন সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসাবোলে এখন থেকে লখনউতেই থাকবেন বলে সূত্রের খবর। এই প্রথম সংঘের দুই বড় নেতা, ভাইয়াজী জোশী এবং দত্তাত্রেয় হোসাবোলে উত্তর প্রদেশে একসঙ্গে থাকবেন। এছাড়া ২০২৫ সালে সংঘ তাদের শতবার্ষিকীও পালন করবে।

উল্লেখ্য, আশির দশকে আরএসএস প্রধান বালাসাহেব দেওরাসের পরামর্শে বিজেপি রাম মন্দির নির্মাণকেই রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করে। এর পরে পালামপুরে বিজেপি মন্দির তৈরির একটি প্রস্তাব পাস করে। ১৯৯০ সালে রাম রথযাত্রার মাধ্যমে লাল কৃষ্ণ আদবানী এই আন্দোলনকে একটি বড় আকার দেন। আরএসএস ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে দ্রুততার সঙ্গে মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায়। এরফলে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি বিশেষ সুবিধা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: মুক্তি পাচ্ছেন অসমের সিএএ বিরোধী নেতা অখিল গগৈ