নয়া দিল্লি: জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা (Article 370) প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলার শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme court)। সেই মামলার আবেদনকারীদের একজন হলেন লোকসভার সাংসদ তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা মহম্মদ আকবর লোন (Md. Akbar Lone)। অথচ তিনিই বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান তুলেছিলেন। যার প্রেক্ষিতে আকবর লোনের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্ষমা চেয়ে তাঁকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে সাংসদ মহম্মদ আকবর লোনের দাবি, ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হল জম্মু ও কাশ্মীর। অথচ তিনিই বিধায়ক থাকাকালীন সময়ে ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সমর্থনে কীভাবে স্লোগান দিলেন, তা নিয়ে কেন্দ্রের তরফে প্রশ্ন তুলেছেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতার ওই আচরণের নিন্দা জানিয়ে তুষার মেহতার দাবি, আকবর লোন যে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের তীব্র বিরোধিতা করেন, সে ব্যাপারে তাঁর হলফনামা দেওয়া উচিত। কেন্দ্রের সলিসিটার জেনারেলকে সমর্থন জানিয়ে অ্যার্টনি জেনারেল আর ভেঙ্কটারামানি বলেন, “তিনি (আকবর লোন) চাইছেন, তাঁর মৌলিক অধিকার বলবৎ হোক। অথচ তারপরেও বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করছেন।”
তুষার মেহতা ও অ্যার্টনি জেনারেলের এই দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের পাল্টা প্রশ্ন, “আকবর লোন কি সম্পূর্ণভাবে দেশের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন এবং সত্যিই মনে করেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ?”
যদিও সিজেআই-এর প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, “আকবর লোন লোকসভার সাংসদ এবং তিনি অবশ্যই বিশ্বাস করেন যে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।” তিনি আরও বলেন, “৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে আবেদনকারীদের কেউই ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন না। আকবর লোনও নিঃশর্তে বিশ্বাস করেন, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।”
কপিল সিব্বালের এই যুক্তির পরেও জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেওয়ায় ক্ষমা চেয়ে হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিজেআই। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের তরফে জানানো হয়, “আকবর লোন যে ভারতীয় সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিয়েছেন এবং সমস্ত ভারতীয়ের মতো তিনিও বিশ্বাস করেন যে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সে ব্যাপারে তাঁর হলফনামা জমা দেওয়া উচিত।”
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার অর্থাৎ ৩৭০ ধারা বাতিল করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যার বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক পিটিশন দায়ের হয় এবং জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। অবশেষে সেই সমস্ত পিটিশনকারীদের কথা শুনতে রাজি হয় শীর্ষ আদালত। গত ২ অগস্ট থেকে প্রতিদিন প্রধান বিচারপতি ডি.ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের অধীনে এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। সিজেআই ছাড়াও এই সাংবিধানিক বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কাউল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বি.আর গবাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত।