
মুম্বই: গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল শিনা বোরা হত্যাকাণ্ড। ‘কুসন্তান হলেও, কুমাতা হয় না’, পরিচিত প্রবাদ বাক্যকে মিথ্যা করে দিয়েছিল শিনা বোরা হত্যাকাণ্ড। অভিযোগ ছিল, শিনার মা, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় প্রতিহিংসায় খুন করিয়েছিলেন মেয়েকে। সুটকেসে ভরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় শিনার দেহ। সেই ঘটনায় এবার নয়া মোড়।
শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডে অন্যতম সাক্ষী ছিলেন বিধি মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের আরেক মেয়ে। মঙ্গলবার তিনি দাবি করলেন যে তদন্তকারী সংস্থার সামনে তিনি কোনও বয়ান রেকর্ড করেননি। সিবিআইয়ের পেশ করা চার্জশিটে তাঁর বয়ান হিসাবে যে নথি জমা দেওয়া হয়েছিল আদালতে, তাও মিথ্যা ও জাল।
শিনা বোরা ছিলেন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের সন্তান। বিধি ইন্দ্রাণী ও তাঁর দ্বিতীয় স্বামী সঞ্জীব খান্নার মেয়ে। শিনা হত্যাকাণ্ডে ইন্দ্রাণী ও সঞ্জীবের নাম জড়িয়েছিল। শিনা হত্যাকাণ্ডে স্পেশাল সিবিআই আদালতে বিধি মুখোপাধ্যায় অন্যতম সাক্ষী ছিলেন।
বিধির দাবি, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় এখন নিঃস্ব। মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায়, যিনি ইন্দ্রাণীর তৃতীয় স্বামী ছিলেন, তাঁর দুই ছেলে রাহুল ও রবিন, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের কোটি টাকার সমস্ত পৈত্রিক গহনা এবং অ্যাকাউন্ট থেকে ৭ কোটি টাকা চুরি করে নিয়েছেন। ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়কে মিথ্যা ফাঁসানোর চেষ্টা করবে তারা।
শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডের সময় বিধি নাবালিকা ছিলেন। তাঁর দাবি, মায়ের গ্রেফতারির পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সেই মানসিক ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। বিধি জানিয়েছেন, মুম্বই পুলিশ তাঁকে তদন্তের জন্য ডেকেছিল। পরে সিবিআই-ও ডাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। তাদের প্রশ্নের জবাব দিলেও, পুলিশ বা সিবিআইয়ের কাছে কোনও বয়ান রেকর্ড করেননি বলেই দাবি বিধির। তাঁকে দিয়ে একাধিক নথি, ইমেলের কপি ও সাদা কাগজে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। বিধি আদালতে দাবি করেন যে তিনি এমন কোনও বয়ান রেকর্ড করেননি। তাঁর মা-বাবা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও সঞ্জীব খান্নাকে মিথ্যা ফাঁসানোর জন্য কেউ এই চেষ্টা করেছে।
বিধি দাবি করেন যে শিনা তাঁকে তাঁর দিদি বলেই পরিচয় দিয়েছিল। প্রথমে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় ও শিনা বোরার মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। রাহুল (পিটার মুখোপাধ্যায়ের ছেলে) যখন মুম্বইয়ের ওরলি ফ্ল্যাটে আসতে শুরু করে, তখন থেকে সম্পর্কে অবনতি হয়। রাহুল মাদক সেবন করত এবং শিনাকেও সেই পথে নিয়ে যাচ্ছিল। এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই পরিবারে আরও অশান্তি শুরু হয়। ২০১১ সালে গোয়ায় পরিবারের এক সদস্যের বিয়েতে শেষবার শিনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল বিধির। তবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইমেইলের মাধ্যমে তাঁদের কথাবার্তা হত।
অভিযোগ, ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে শিনা বোরা (২৪)-কে গাড়ির ভিতরে গলা টিপে হত্যা করেন তাঁর মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, সৎ বাবা সঞ্জীব খান্না ও তাদের গাড়ির চালক শ্যাম রাই। এরপর তাঁর দেহ সুটকেসে ভরে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং রায়গড়ের জঙ্গলে দেহ ফেলে দেওয়া হয়।
২০১৫ সালে এই হত্যাকাণ্ড সামনে আসে যখন অস্ত্র আইনে অন্য একটি মামলায় ইন্দ্রাণীর গাড়ির চালক শ্যাম রাইকে গ্রেফতার করা হয়। তখনই শ্যাম শিনার হত্যাকাণ্ড ফাঁস করে দেয়। পুলিশ গ্রেফতার করে ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, তাঁর প্রাক্তন স্বামী সঞ্জীব খান্না ও পিটার মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়।
অভিযোগ ওঠে, ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় শিনার ইমেইল থেকে মেইল পাঠাতেন লোকজনকে বিশ্বাস করাতে যে শিনা বোরা জীবিত রয়েছে।