
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম তিরস্কারের মুখে কমেডিয়ান সময় রায়না। “যখন নিজের বক্তব্যকে বাণিজ্যিকরণ করেন, তখন কোনও সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে আঘাত করতে পারেন না”, সময় রায়না সহ একাধিক কমেডিয়ান, যারা বিভিন্ন রোগ ও বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে মজা করেছিলেন, তাদের এই বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ক্ষমা চাইতে বলা হয় সময় রায়নাকে।
আজ, ২৫ অগস্ট সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার মামলার শুনানি চলছিল। এই ফাউন্ডেশন স্পাইনাল মাসকিউলার অ্যাট্রোফি আক্রান্ত ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়। সময় রায়না, বিপুন গয়াল, বলরাজ পরমজিৎ সিং ঘাই, সোনালি ঠক্কর ও নিশান্ত জগদীশ তানওয়ার এই রোগ নিয়ে মজা করেছিলেন। তাদের এই মন্তব্য নিয়েই শীর্ষ আদালতে মামলা করা হয়। ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট (India’s Got Latent) বিতর্ক মামলার সঙ্গে এই মামলা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। এই মামলায় ইউটিউবার রণবীর এলাহাবাদিয়ার নামও রয়েছে।
সময় রায়নার ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে আইনজীবী বলেন যে সুপ্রিম কোর্ট কড়া বার্তা দিয়েছে। এ কথা উল্লেখ করতেই বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “ক্ষমা চাওয়া এক বিষয়…তবে প্রতিবার কি ফাউন্ডেশনকে আদালতে আসতে হবে এর জন্য? কী হবে যদি নির্দিষ্ট কাউকে আক্রমণ করা হয়?”
সঙ্গে সঙ্গে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “হাস্যরস জীবনের অংশ, আমরা নিজেদের উপরে মজা গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু যখন অন্যের মজা ওড়ানো হয়, তখন তা সংবেদনশীলতা লঙ্ঘন করে। ভারত বৈচিত্রপূর্ণ দেশ, যেখানে বহু সম্প্রদায় রয়েছে। আজকের কথাকথিত ইনফ্লুয়েন্সাররা…যখন নিজের বক্তব্যের বাণিজ্যিকরণ করছেন, তখন কোনও সম্প্রদায়কে ব্যবহার করতে বা কারোর ভাবাবেগে আঘাত দিতে পারেন না”। বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত।”
সময় রায়না সহ অন্যান্য কমেডিয়ানদের তরফে হাজির আইনজীবী বলেন, “আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি। আদালতের নির্দেশ মতো তারা আজ এখানে উপস্থিতও রয়েছেন”। সুপ্রিম কোর্টের তরফে জরিমানা করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, “আজ বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে বলা হচ্ছে, পরেরবার মহিলা, প্রবীণ নাগরিক, শিশুদের নিয়ে বলতে পারেন…কোথায় গিয়ে এটা থামবে?”
তখন আইনজীবী বলেন যে জরিমানার বদলে অন্য কোনও কাজ যা বিশেষভাবে সক্ষম বা বিরল রোগে আক্রান্তদের জন্য ভাল হবে, এমন কিছু করতে নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। “এদের ইনফ্লুয়েন্স ব্যবহার করতে দিন এই ইস্যুটাক এগিয়ে নিয়ে যেতে। সেটাই সেরা ক্ষমা চাওয়া হবে”। কমেডিয়ানরাও এই শর্তে রাজি হন।
শীর্ষ আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কমেডিয়ানদের নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আদালতে জানাতে যে তারা কী শাস্তি গ্রহণ করতে চান।
কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়ার তরফে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী অপরাজিতা সিং বলেন, “সুবুদ্ধি হয়েছে। সকল কমিকরা ক্ষমা চেয়েছেন”। তবে শীর্ষ আদালত আরেকটি হলফনামা তুলে ধরে, বলা হয়, “রেসপনডেন্ট ৬ (সময় রায়না) নিজেকে অতি সরল হিসাবে দেখাতে চেয়েছেন, তারপর ক্ষমা চেয়েছেন।”
কেন্দ্রের তরফে হাজির অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটারামানি জানান যে সম্পূর্ণ কণ্ঠরোধ করা যেতে পারে না। কমিক ও ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করতে কেন্দ্রের কিছু সময় লাগবে।
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ এ দিন বলে যে একটি ঘটনার উপরে ভিত্তি করে গাইডলাইন তৈরি করা যায় না। ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সর্বাত্বক বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতেও বলা হয়েছে শীর্ষ আদালতের তরফে।