নয়া দিল্লি ও কলকাতা: বহুদিন আগে রবি ঠাকুর বলে গিয়েছিলেন, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।” এবার সেই রবির উক্তিতেই ভরসা রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। তবে প্রেক্ষিত ভিন্ন। এক্ষেত্রে তৃণমূলের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি এমনটা তো নয়। বরং তৃণমূল কংগ্রেসই খুব সন্তর্পণে কংগ্রেস সহ একাধিক বিরোধী দলগুলিকে এড়িয়ে যাচ্ছে। সংসদেও বিক্ষোভ প্রতিবাদের দিক থেকে ভিন্ন অবস্থান তৃণমূলের। কেন্দ্রের শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে সুর তো তুলেছে। তবে তা একাই। কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলি আলাদভাবে বৈঠক ও ধর্না প্রদর্শন করেছে। সেখানে অংশ নেয়নি তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের অধিবেশন শুরুর সময় থেকেই গান্ধী মূর্তির সামনে একাই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদরা। এর থেকে স্পষ্ট ২৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘একলা চলো’ নীতিতেই হাঁটতে চায় তৃণমূল কংগ্রেস।
তবে এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলছে, তৃণমূল কংগ্রেস কি নিজেই একা হাঁটার পথ বেছে নিয়েছে। নাকি জাতীয় রাজনীতিতে একঘরে হয়ে পড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই একলা চলোর ভাবনা ঘাসফুল শিবিরের। দিল্লিতে মোদী সরকারি বিরোধী কোনও প্রতিবাদে সামিল হওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই বলে আগেই জানিয়েছিল তৃণমূল। গতকাল কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৮ টি বিরোধী দল ইডি অফিসে অভিযান চালায়। সেখানেও গরহাজির ছিল তৃণমূল। এদিকে একলা চলো নীতি গ্রহণ করায় ক্রমশ একলা হয়ে পড়ছে না তো তৃণমূল কংগ্রেস?
সংসদেও চাপ বেড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। আজ গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মমতার ছবি নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি সাংসদরা। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, চাকরি চুরিই ছিল বিক্ষোভের মূল বিষয়। এদিকে তৃণমূল সাংসদ সংসদে কংগ্রেসের বৈঠকে যোগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এবং সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে লড়াই করছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে তৃণমূল। এদিকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও জানিয়ে দিয়েছেন, “তৃণমূল কংগ্রেস ও মানুষের জোট হবে। আমরা ওদের কারও সঙ্গে যাব না। আমরা একা লড়ব মানুষের সমর্থন নিয়ে।” অর্থাৎ, ২৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী ঐক্য গড়ার যে সম্ভাবনা নেই, তা স্পষ্ট তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্তব্যে।
তবে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে এবার তৃণমূল কোনও বিরোধী ঐক্য তৈরি করতে চায় কি না তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। কারণ জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস যখন ক্রমশ একা হয়ে পড়ছে সেই পরিস্থিতিতে ঘাসফুল শিবিরের হাত ধরতেই কি অখিলেশের কলকাতায় আগমন! সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেই নজরে মমতা-অখিলেশের বৈঠক। কলকাতায় ১৭ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ সমাজবাদী পার্টির জাতীয় কার্যনির্বাহী বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সেই বৈঠকে যোগ দিতে আসছেন সপা প্রধান অখিলেশ যাদব। এই সম্মেলনের পাশাপাশি আগামিকাল বিকেল ৫ টায় কালীঘাটে মমতা-অখিলেশ বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকে ‘একলা’ তৃণমূলের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে সপা। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে কংগ্রেসহীন যৌথ মঞ্চ গড়ার আবেদন জানাতে পারেন সপা প্রধান। তবে সূত্রের দাবি এটা কোনও জোটের বার্তা হবে না। তবে একটা মঞ্চ বটে। যদিও এই বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি। আগামিকাল বৈঠকের পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনও করারও সম্ভাবনা দেখা গিয়েছে। এই বৈঠকে দুই দলই কী সিদ্ধান্ত নেয় তা এই বৈঠক থেকে স্পষ্ট হবে। ভারতের উত্তর ও পূর্বের দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভোট পূর্ববর্তী কোনও জোট হবে কি না তা সময়ই বলবে।