
নয়া দিল্লি: ব্রিটেন সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিমান থেকে নেমে আসছেন তিনি। ঠিক তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে কালো স্যুট পরা এক মহিলা। দৃঢ় চোয়াল, চোখের পাতা যেন নিস্পলক। সকলের নজর যেন কেড়ে নিলেন এক নিমেষে। মুহূর্তে ভাইরাল ভিডিয়ো। কে তিনি?
ভাইরাল ভিডিয়োতে যাঁকে দেখা যাচ্ছে, তিনি আদাসো কাপেসা। মণিপুরে জন্ম, কর্তব্যরত কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনী ‘সশস্ত্র সীমা বল’ বা SSB-তে। নজির গড়ে আদাসো কাপেসা-ই প্রথম মহিলা, যিনি প্রধানমন্ত্রীর ‘এলিট’ সুরক্ষাবাহিনী SPG-তে যোগ দিয়েছেন ও মোদীর বিদেশ সফরে সঙ্গী হয়েছেন।
SPG মানে ‘স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্ৰুপ’। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ভারতের ‘প্রিমিয়াম’ নিরাপত্তা বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা দেশে বা বিদেশে সর্বক্ষণ প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে থাকেন। গায়ে থাকে বুলেটপ্রুফ জামা, হাতে FN P 90 machine gun, কোমরে গ্লক অটোমেটিক পিস্তল। প্রধানমন্ত্রীকে যে কোনও হামলার হাত থেকে বাঁচানোই এসপিজি-র প্রাথমিক কর্তব্য।
মণিপুরের ‘দুর্গা’ কাপেসা বর্তমানে এসএসবি-র উত্তরাখণ্ডের পিথোরগড়ে ৫৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের সদস্য। তাঁর যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ সদস্য ঠাসা ‘এসপিজি’তে প্রবেশ করলেন এক মহিলা। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে তাঁর অন্তর্ভুক্তি শুধু ঐতিহাসিক-ই নয়, যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ-ও বটে। উত্তর-পূর্বের প্রতিনিধি হয়ে দেশের সর্বোচ্চ শক্তিশালী ব্যক্তির সুরক্ষাবলয়ে প্রবেশ করলেন। দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর-পূর্ব ভারতের বাসিন্দারা মূল ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলে। সেই প্রথাগত অভিযোগ এবার ভেঙে দিলেন মোদী। একইসঙ্গে ‘এলিট’ বাহিনীতে মহিলাদের অংশ নেওয়ার রাস্তাও চওড়া হল কাপেসার এসপিজি-তে যোগদানের মধ্যে দিয়ে।
কাপেসা-র জন্ম মণিপুরের সেনাপতি জেলার কাইবি গ্রামে। আজ তিনি মণিপুর তো বটেই, গোটা দেশের গর্ব। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে অভাবে। গ্রামে সবকিছুরই জোগানে টান। কিন্তু যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা জয় করে কঠিন পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনীতে সফলভাবে যোগ দেন। এসপিজি-র জন্য নির্বাচিত হওয়া কিন্তু মুখের কথা নয়। তার জন্য অত্যন্ত কড়া কমান্ডো ট্রেনিংয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যেখানে শুধু শারীরিক সক্ষমতা নয়, মানসিক মজবুতি ও মুহূর্তের মধ্যে রি-অ্যাক্ট করতে হয়। প্রশিক্ষণ চলাকালীন কাপেসা-র পারফরম্যান্স দেখে তাঁকে এসপিজির জন্য বেছে নেওয়া হয়। তাঁর এসপিজি-তে যোগদান দেশের অন্য মহিলাদের সামনেও এক নয়া দিগন্ত খুলে দিল বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।