
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে এক মামলার শুনানি চলাকালীন, এক আইনজীবীকে তাঁর বেতনের অর্ধেক দিয়ে দিতে চাইলেন বিচারপতি পিএস নরসীমা! ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় এখনও ব্রিটিশ আমলের বড় প্রভাব রয়েছে। বিভিন্ন আইন হোক, কিংবা বিচার ব্যবস্থর বিভিন্ন রীতিনীতি, সব কিছুতেই ঔপনিবেশিক যুগের ছাপ রয়েছে। আর এর অন্যতম হল, আদালত কক্ষে বিচারপতিদের ‘মাই লর্ড’ বা ‘ইওর লর্ডশিপ’ বলে সম্বোধন করা। ব্রিটিশ ‘প্রভু’রা চলে গেলেও, ভারতীয়দের প্রভুভক্তি এখনও দূর হয়নি। আর এই নিয়েই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন বিচারপতি নরসীমা।
ঘটনাটি ঘটেছে চলতি সপ্তাহের বুধবার (১ নভেম্বর)। বিচারপতি এএস বোপান্নার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের এক বেঞ্চে হাজির ছিলেন বিচারপতি পিএস নরসীমা। সুপ্রিম কোর্টের এক বিশিষ্ট আইনজীবী তাঁদের সামনে মামলার যুক্তি পেশ করছিলেন। সেই সময় ওই আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বারবার ‘মাই লর্ড’ এবং ‘ইওর লর্ডশিপ’ বলে সম্বোধন করছিলেন। আর এতেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন বিচারপতি নরসীমা।
ওই আইনজীবীকে বিচারপতি নরসীমা বলেন, “আপনি কতবার ‘মাই লর্ডস’ বলবেন? আপনি যদি বারবার এটা বলা বন্ধ করেন, তবে আমি আপনাকে আমার বেতনের অর্ধেক দিয়ে দেব। কেন আপনি এর পরিবর্তে ‘স্যার’ ব্যবহার করছেন না? যদি আপনি ‘মাই লর্ডস’ বলা বন্ধ না করেন, তাহলে এই অভিব্যক্তিটি আপনি কতবার উচ্চারণ করেছেন, আমি তা গণনা করতে শুরু করব।”
বিচারপতি নরসীমার এই মন্তব্যের পর, ঐ আইনজীবী তাঁকে স্যার বলে ডাকা শুরু করেন। তবে, ভারতে এখনও সব স্তরের আদালতেই যুক্তি-তর্কের সময় বিচারকদেরকে ‘মাই লর্ড’ বা ‘ইয়োর লর্ডশিপ’ বলেই সম্বোধন করে থাকেন আইনজীবীরা। অনেকেরই দাবি, বিচার বিভাগে এই সম্বোধনের প্রথা, ঔপনিবেশিক যুগের অবশেষ, দাসত্বের চিহ্ন। এই প্রথার অবাসান চান তাঁরা। বস্তুত, ২০০৬ সালে, ‘বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে এই বিষয়ে একটি রেজোলিউশনও পাশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, বিচারকদের কোন উকিল আর ‘মাই লর্ড’ এবং ‘ইয়োর লর্ডশিপ’ বলে সম্বোধন করবেন না। কিন্তু, সেই অঙ্গীকার খাতা-কলমেই থেকে গিয়েছে। বাস্তবে কখনই অনুসরণ করা হয়নি।
গত কয়েক বছরে মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দিক থেকে ভারতের ঔপনিবেশিক দাসত্বের অতীতকে পিছনে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। নাম বদল, মূর্তি বদলের মতো পদক্ষেপ করা হয়েছে। এবার কি, বিচারপতিদের উদ্যোগে বিচার বিভাগ ঔপনিবেশিক প্রভাব মুক্ত হবে?