
বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখাশোনা না করলে ছেলেমেয়ের কোনও অধিকার নেই তাঁদের বাড়ি বা সম্পত্তিতে, এমনই কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি নিঃসন্তান হিন্দু বিধবার সম্পত্তি নিয়ে আদালত জানিয়েছে, বাপের বাড়ির নয়, সম্পত্তিতে অধিকার থাকবে শ্বশুরবাড়ির।
প্রথম মামলাটি উত্তরপ্রদেশের ৮০ বছরের কমলাকান্ত মিশ্র ও তাঁর ৭৮ বছরের স্ত্রীর। দম্পতির মুম্বইয়ে দুটি বাড়ি থাকলেও, তাঁদের বড় ছেলে সেখানে থাকতে দেননি। ২০০৭ সালের Maintenance and Welfare of Parents and Senior Citizens Act-এর আওতায় ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন তাঁরা। ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দেয়, ছেলেকে বাড়ি ছাড়তে হবে। তবে ছেলে বম্বে হাইকোর্টে গিয়ে দাবি করে, তিনিও সিনিয়র সিটিজেন, তাই উচ্ছেদ করা যায় না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই রায় খারিজ করে জানায়, মা-বাবাকে না দেখলে ছেলেমেয়ের তাঁদের বাড়িতে থাকার অধিকার নেই।
বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ স্পষ্ট জানায় —
মা-বাবাকে না দেখলে তাঁদের সম্পত্তিতে সন্তানদের কোনও অধিকার নেই। মা-বাবা চাইলে ছেলেমেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারেন। এই সংক্রান্ত রায় দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালেরই আছে।
আদালতের নির্দেশ, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ওই ছেলেকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে এবং সে বিষয়ে হলফনামা জমা দিতে হবে। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই রায় সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবে।
অন্যদিকে, আরেক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, নিঃসন্তান হিন্দু বিধবার সম্পত্তিতে বাপের বাড়ি নয়, শ্বশুরবাড়িরই অধিকার থাকবে।
মামলার পটভূমি, কোভিডে অল্পবয়সে মৃত্যু হয় এক দম্পতির। তাঁদের কোনও সন্তান ছিল না। এরপর সম্পত্তি দাবি করেন মহিলার মা, অন্যদিকে দাবি তোলে শ্বশুরবাড়িও। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী, নিঃসন্তান বিধবার মৃত্যুর পর সম্পত্তি যায় স্বামীর পরিবারের কাছে।
বিচারপতি বিভি নাগরত্না ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানায়, উইল না থাকলে মহিলার সম্পত্তিতে শ্বশুরবাড়ির অধিকার, বাপের বাড়ির নয়।
বিচারপতি নাগরত্নার মন্তব্য, ‘এই আইন হাজার বছরের প্রথার ভিত্তিতে তৈরি, আমরা সেটি বদলাতে চাই না।’
তবে আইনজীবী মহলের একাংশের মতে, গোত্র বদল বা ধর্মীয় রীতি আইনি যুক্তিতে আসা ঠিক নয়। স্ত্রীধনে স্বামীরও অধিকার নেই, তাই শ্বশুরবাড়ি কীভাবে অধিকারী হতে পারে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১১ নভেম্বর।