
নয়া দিল্লি: ১২ বছরের সন্তানের দায়িত্ব বাবাকে দিয়েছিল, কিন্তু তাঁর কান্না শুনে রায় বদল করতে বাধ্য হল শীর্ষ আদালত। বৈবাহিক বা দাম্পত্য সমস্যায় সন্তানের কাস্টডি বা দায়িত্ব কার থাকবে, তা চূড়ান্ত বা পরিবর্তন করা যায় না, এমনটা নয়।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি প্রসন্ন বি ভারালের বেঞ্চে বিবাহ বিচ্ছেদ ও সন্তানের দায়িত্বভার কার কাছে থাকবে, তা নিয়ে মামলা চলছিল। প্রথমে ১২ বছরের ওই কিশোরের দায়িত্বভার তাঁর বাবাকে দেওয়া হয়েছিল। তবে আদালতের এই রায়ে কিশোরের স্বাস্থ্য ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কিশোর অ্যানজাইটিতে ভুগতে থাকে।
২০১১ সালে ওই দম্পতির বিয়ে হয়। ২০১২ সালে তাদের সন্তান হয়। এক বছর পরই তারা আলাদা হয়ে যায়। এরপর ওই মহিলা দ্বিতীয় বিয়ে করেন ২০১৬ সালে। তাঁর দ্বিতীয় স্বামীর আগের পক্ষের দুটি সন্তান ছিল। তাদের নিজেদেরও একটি সন্তান হয়।
এদিকে, প্রথম পক্ষের স্বামী দাবি করেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি জানতেনই না তাঁর ছেলে কোথায় রয়েছে। প্রাক্তন স্ত্রী একদিন তাঁকে যোগাযোগ করে কিছু কাগজপত্র সইয়ের জন্য কারণ তিনি বর্তমান স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে মালয়শিয়ায় চলে যাচ্ছেন। সেই সময়ই ওই ব্যক্তি জানতে পারেন যে তাঁর অজান্তেই ছেলের ধর্মও হিন্দু থেকে খ্রিস্টানে পরিবর্তিত করা হয়েছে।
এরপর তিনি সন্তানের হেফাজতের দাবিতে পারিবারিক আদালতে যান। তবে সেখানে রায় তাঁর বিপক্ষেই যায়। এরপর তিনি হাইকোর্টে যান। সেখানে তাঁকেই সন্তানের দায়িত্বভার দেওয়া হয়। হাইকোর্টের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে প্রাক্তন স্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। গত বছরের অগস্ট মাসে যখন মামলার শুনানি হয়, সুপ্রিম কোর্ট ওই মহিলার আবেদন খারিজ করে দেয়।
এরপরে ওই মহিলা শীর্ষ আদালতে নতুন করে আবেদন করেন। দাবি করেন যে আদালতে কাস্টডির নির্দেশে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সাইকোলজিস্টের রিপোর্টও জমা দেন যেখানে উল্লেখ ছিল যে কিশোরের সেপারেশন অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডারের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
এরপরই শীর্ষ আদালত সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বলা হয়, নাবালকের স্বার্থে সিদ্ধান্ত বদল করা যায়। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয় যে সন্তানের যখন ১১ মাস বয়স ছিল, তখন তারা আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর সন্তান হাতেগোনা কয়েকবারই তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেক্ষেত্রে এই ধরনের সিদ্ধান্তে (কাস্টডিতে বদল) সন্তানের উপরে প্রভাব পড়তে পারে। নাবালকের মা-বাবার কাছে আর্জি জানানো হয় যে তারা যেন অতীতের তিক্ততা ভুলে সন্তানের জন্য পারস্পরিক দূরত্ব মেটানোর চেষ্টা করেন।