SC on Waqf Act: ‘মুসলিমদের কি হিন্দু বোর্ডে রাখবেন? স্পষ্ট বলুন’, কেন্দ্রকে প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের
Supreme Court: সংশোধিত ওয়াকফ আইনের একাধিক ধারা নিয়ে শীর্ষ আদালতের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। বিশেষ করে 'ওয়াকফ বাই ইউজার' বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট।

নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে ওয়াকফ সংশোধনী আইন। এ দিন সংশোধিত ওয়াকফ আইনের একাধিক ধারা নিয়ে শীর্ষ আদালতের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় সরকারকে। বিশেষ করে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ বিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট। ওয়াকফ কাউন্সিলে অ-মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত করা নিয়েও প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। কেন্দ্রের কাছে জানতে চায়, হিন্দু চ্যারিটি বোর্ডে কি মুসলিমদের অংশ হতে দেবে?
কেন্দ্রীয় সরকারের আনা ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে ৭৩টি পিটিশন জমা পড়েছিল। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে এদিন পিটিশনগুলির শুনানি শুরু হয়।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না যেভাবে বহু সম্পত্তিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে দাবি করা হয়েছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমাদের বলা হয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট নাকি ওয়াকফ জমিতে তৈরি। ওবেয়র হোটেলও ওয়াকফ জমির উপরে তৈরি…আমরা বলছি না যে সমস্ত ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তি ভুয়ো রেজিস্টার করা, কিন্তু এটা নিয়ে বেশ কিছু উদ্বেগের জায়গাও রয়েছে।”
ওয়াকফ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে এই মামলা সরাসরি শীর্ষ আদালতে শুনানি হবে নাকি প্রথমে হাইকোর্টে যাওয়া উচিত, এই নিয়ে বাদি-বিবাদী দুই পক্ষকেই প্রশ্ন করেন সুপ্রিম কোর্ট।
মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী কপিল সিব্বাল বলেন, “কোন ধর্মে উত্তরাধিকার কীভাবে হবে, তা বলার রাজ্য কে? ইসলামিক আইনে মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার হয় সম্পত্তিতে। সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে।”
এর জবাবে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, “কিন্তু হিন্দু নিয়মে এটা হয়…তাই সংসদ মুসলিমদের জন্যও আইন এনেছে। হয়তো এটা হিন্দুদের আইনের মতো নয়। এই ক্ষেত্রে ২৬ অনুচ্ছেদ আইন প্রণয়নে বাধা দেবে না। ২৬ অনুচ্ছেদ সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ধর্মনিরপেক্ষ।”
সিব্বাল সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, “ইসলামে উত্তরাধিকার মৃত্যুর পর হয়। এরা (সরকার) তা আগেই হস্তক্ষেপ করছে।”
ওয়াকফ সংশোধনী আইনে ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ অংশটি বাদ দেওয়া নিয়ে কেন্দ্রের কাছে ব্যাখা চায় শীর্ষ আদালত। যেহেতু দেশের অধিকাংশ মসজিদই ১৪ বা ১৬ শতাব্দীতে তৈরি হয়েছে, তাই এর কোনও বিক্রির নথি বা ডিড নেই। কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্ট বলে, “আপনারা এখনও উত্তর দেননি যে ওয়াকফ বাই ইউজার ঘোষণা করা হয়েছে কি না? এটি তাহলে প্রতিষ্ঠিত কোনও আইনকে প্রত্যাহার করা হবে। কীভাবে ওয়াকফ বাই ইউজারের কেস রেজিস্টার করবেন আপনারা? আপনারা বলতে পারেন না যে সব (ওয়াকফ সম্পত্তি) সত্যি নয়। মসজিদগুলির পক্ষে মালিকানার প্রমাণ দেওয়া সম্ভব নয় কারণ এগুলি ওয়াকফ বাই ইউজার সম্পত্তি।”
প্রসঙ্গত, ওয়াকফ বাই ইউজার সম্পত্তি হল সেই সম্পত্তিগুলি যেগুলি ধর্মীয় বা দান-ধ্যানের জন্য দান করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর কোনও বৈধ নথি থাকে না। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি বা যে জমি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, সেগুলিকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে গণ্য করা হবে না।
এ দিনের শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের তরফে ওয়াকফ বোর্ড ও কাউন্সিলে অ-মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। “মুসলিমদেরও কি হিন্দু বোর্ডের সদস্য হতে দেবেন? স্পষ্ট বলুন।”
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের তরফে বলা হয়, যেসব সম্পত্তিকে আদালত ওয়াক্ফ হিসাবে ঘোষণা করেছে, তা “ওয়াকফ বাই ইউজার” হোক বা “ওয়াকফ বাই ডিড” হোক, সেগুলি এই মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন ওয়াকফ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না, তা সে সরকারি সম্পত্তির উপরেই হোক না কেন।
কেন্দ্রের তরফে মামলা লড়ছেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি প্রশ্ন করেন, “ওয়াকফ সম্পত্তিতে মন্দির, দোকান রয়েছে। আইনে বলা হয়নি যে এই জমির ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাবে। আইনে বলা হয়েছে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত, ওয়াকফ এর সুযোগ-সুবিধা পাবে না।”
প্রধান বিচারপতি এর সাপেক্ষে প্রশ্ন করেন, “তাহলে কী হবে? ওই দোকানের ভাড়া কোথায় যাবে? বিধানে কি বলা হয়েছে?” সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “আইনে বলা হয়নি যে ওয়াকফের সম্পত্তির ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হবে।”
শীর্ষ আদালত আরও জানায়, কোন জমি সরকারের, না ওয়াকফের তা কালেক্টেরের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে না। সংশোধনী আইনের নতুন এই ধারাটি মামলা বিচারাধীন থাকা পর্যন্ত কার্যকর করা যাবে না।
আগামিকাল দুপুর দুটোয় ফের ওয়াকফ মামলার শুনানি রয়েছে।





