নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর), শেষ হল ১৬ দিনের ম্যারাথন শুনানি। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিলের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একগুচ্ছ আবেদন জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। অগস্ট থেকে, এই মামলার শুনানি চলছিল ভারতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কওল, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের সাংবিধানিক বেঞ্চে। এদিন শুনানি শেষ হলেও, রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে আদালত। প্রসঙ্গত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করেছিল। ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট এই অনুচ্ছেদ বাতিল করেছিল মোদী সরকার। এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার পাশাপাশি, শীর্ষ আদালতে করা আবেদনে জম্মু-কাশ্মীর রেকগনিশন অ্যাক্টকেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। এই নয়া আইনের বলেই পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে, জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছিল।
কবে এই মামলার রায় দেওয়া হবে, তা জানায়নি সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত বলেছে যে আবেদনকারী বা উত্তরদাতাদের পক্ষ থেকে কোনও আইনজীবী যদি আরও কোনও লিখিত যুক্তি জমা দিতে চান, তবে আগামী তিন দিনের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। তবে, তা দুই পৃষ্ঠার বেশি দীর্ঘ হলে হবে না। সেই যুক্তিগুলি খতিয়ে দেখার পরই সম্ভবত রায় ঘোষণার দিন জানানো হবে। এই মামলার আবেদনকারীদের অন্যতম ছিলেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ মহম্মদ আকবর লোন। তাঁর বিরুদ্ধে জম্মুৃকাশ্মীর বিধানসভায় ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ করেছিল কেন্দ্র। সোমবার, শীর্ষ আদালত তাঁকে একটি হলফনামা দাখিল করে ভারতের সংবিধানের এবং জম্মু ও কাশ্মীর যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই বিশ্বাসের প্রতি তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। এদিন আদালতে তিনি সেই মতো একটি হলফনামা দাখিল করেন। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, তাঁর হলফনামাটিকে ‘প্রহসন’ বলেছেন।
তিন বছর ধরে ঝুলে থাকার পর, চলতি বছরের ২ অগস্ট এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছিল। পরবর্তী ১৬ দিনের শুনানিতে দুই পক্ষই বিস্তৃত যুক্তি তুলে ধরে আদালতে। প্রথম নয় দিন আবেদনকারীদের কৌঁসুলিরা তাঁদের যুক্তিতুলে ধরেন। ভারতের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করেন তাঁরা। তাঁরা দাবি করেন, ভারত রাষ্ট্রের কাছে জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ববর্তী মহারাজা কখনই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব ত্যাগ করেননি।
জবাবে, কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তি দেয় অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার আগে পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ এক ‘মনস্তাত্ত্বিক দ্বিধায়’ ভুগতেন। ভারত না জম্মু-কাশ্মীর – কোথাকার নাগরিক তারা, এই প্রশ্ন ঘুরত তাঁদের মনে। এই অনুচ্ছেদ বাতিলের ফলে, সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। সেই রাজ্যের মানুষের প্রতি বৈষম্যের মনোভাব ছিল বলেই, আগের সরকারগুলি এই অনুচ্ছেদ বাতিল করেনি বলে দাবি করা হয়। কেন্দ্র আরও যুক্তি দেয়, সংবিধানের প্রণেতা এই অনুচ্ছেদটিকে একটি ‘অস্থায়ী’ বিধান হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। কালক্রমে এই অনুচ্ছেদ বাতিল করার পক্ষেই ছিলেন তাঁরা।