নয়া দিল্লি: শীর্ষ আদালতে বড় ধাক্কা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের ( Enforcement Directorate)। বড় রায় ঘোষণা করল সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। ইডি(ED)-কে প্রতিহিংসা পরায়ণ না হতে বলল শীর্ষ আদালত। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের তরফে ইডিকে সতর্ক করে বলা হল, তাদের কাজে যেন স্বচ্ছতা থাকে এবং কঠোরভাবে আইন মেনেই কাজ করা হয়।
আর্থিক তছরুপের অভিযোগে এম৩এম রিয়েল এস্টেট গ্রুপের ডিরেক্টরদের গ্রেফতারি সংক্রান্ত মামলারই শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে। বিচারপতি এএস বোপান্না ও বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চের তরফে বলা হয় যে ওই রিয়েল এস্টেট সংস্থার দুই ডিরেক্টর পঙ্কজ ও বসন্ত বনসলকে গত ১৪ জুন আর্থিক তছরুপের একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল ইডি। ওই একই দিনে ইডিরই দায়ের করা অন্য একটি মামলায় তাঁদের গ্রেফতার করা হয়। এরপরই সংস্থার দুই ডিরেক্টর আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনের ১৯ নম্বর ধারার অধীনে তাদের গ্রেফতারি বেআইনি বলে চ্যালেঞ্জ করেন এবং হরিয়ানা ও পঞ্জাব হাইকোর্টের রায় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যেখানে তাঁদের গ্রেফতারিতে সম্মতি জানানো হয়েছিল।
মঙ্গলবার ওই মামলায় শীর্ষ আদালতের তরফে অবিলম্বে এম৩এম রিয়েল এস্টেট গ্রুপের দুই ডিরেক্টরদের মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতির বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “ইডি অফিসাররা গ্রেফতারির কারণ মুখে বর্ণনা করেছিলেন, কোনও লিখিত কপি না দিয়ে। এতে ইডি ও তাদের নিম্ন মানের কাজের উপর আলোকপাত করে। বিশেষ করে যেখানে তদন্তকারী সংস্থা দেশের আর্থিক সুরক্ষা রক্ষার দায়িত্ব রয়েছে।”
এত উচ্চ ক্ষমতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার কাছ থেকে কী আশা করা হয়, তার বর্ণনা করে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “ইডিকে স্বচ্ছ হতে হবে। সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে ন্যায়পরায়ণ ও নায্য় হতে হবে। ইডি কখনও নিজের অবস্থানে প্রতিহিংসা পরায়ণ হতে পারে না।”
শীর্ষ আদালতের তরফে গ্রেফতারির ক্ষেত্রে ইডিকেও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচাপতির বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “গ্রেফতারির সময় অবশ্যই লিখিত কপি দিতে হবে কী কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে। এটা সংবিধানের ২২(১) ধারার অধীনে নাগরিকের অধিকার। অভিযুক্ত এই লিখিত কপির উপরে ভিত্তি করেই আইনি পদক্ষেপ করতে পারেন। লিখিত নথি না থাকায় ইডির অভিযোগ লঘু হয়ে যায়, যা এই মামলাতেও হয়েছে।”
এম৩এম রিয়েল এস্টেট গ্রুপের দুই ডিরেক্টর পঙ্কজ ও বসন্ত বনসলের বিরুদ্ধে ট্রায়াল কোর্টের বিচারপতিকে নিজেদের পক্ষে রায়ের জন্য ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ছিল। ইডির অভিযোগ ছিল, ওই রিয়েল এস্টেট সংস্থা মোট ৪০০ কোটি টাকা বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে তছরুপ করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হলে, আদালতের রায় প্রভাবিত করার জন্য ট্রায়াল কোর্টের বিশেষ বিচারপতি সুধীর পরমারকে ঘুষও দেন। ইডির এই অভিযোগের ভিত্তিতেই ২৭ এপ্রিল থেকে ওই বিচারপতিকে সাসপেন্ড করা হয়।
মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, ইডির এফআইআরে পঙ্কজ বা বসন্ত বনসলের নাম ছিল না। কেবল সংস্থার অপর ডিরেক্টর রুপ বনসলের নাম উল্লেখ ছিল। ইডির তরফে এই গ্রেফতারির সাফাই দিয়ে বলা হয়, সংস্থার ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর ছিল। তাঁরা তদন্তে সহযোগিতাও করছিলেন না। সেই কারণে মৌখিকভাবে গ্রেফতারির কারণ ব্যাখ্যা করে ওই দুই ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করা হয়।