
নয়া দিল্লি: ১৯৯৬ সালের লাজপত নগর বোমা বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত মহম্মদ নওশাদ এবং জাভেদ আহমেদ খানের সাজা বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কোনও জামিন বা প্যারোলের সুযোগ পাবে না তারা। এই মামলার অপর দুই আসামি মির্জা নিসার হুসেন এবং মহম্মদ আলি ভাটকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই দুই আসামীকে প্রাথমিকভাবে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল দিল্লির এক নিম্ন আদালত। পরে দিল্লি হাইকোর্ট তাদের সাজা মকুব করেছিল। এদিকে, তাদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং সাজার দেওয়াকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছিল নওশাদ এবং জাভেদ আহমেদ খান। পাশাপাশি, এই মামলায় মির্জা এবং মহম্মদ আলির সাজা মকুবের বিষয়ে দিল্লি হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিল সরকার। সন্ত্রাসবাদী হামলার ২৭ বছর পর, অবশেষে চার দোষীর ভাগ্য নির্ধারণ করল বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সঞ্জয় করোলের বেঞ্চ।
তবে, সরকারের দাবি মেনে মির্জা এবং মহম্মদ আলির মৃত্যুদণ্ডের সাজা পুনর্বহাল করতে রাজি হয়নি বেঞ্চ। এই বিষয়ে বেঞ্চ জানিয়েছে, এই মামলাটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণ বিবেচনা করে, মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে না। স্বাভাবিক জীবন পর্যন্ত কোনও মকুব ছাড়া তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালত আরও জানিয়েছে, আসামিরা যদি জামিনে মুক্ত থাকে, তাহলে তাদের অবিলম্বে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আত্মসমর্পণ করতে হবে মির্জা এবং মহম্মদ আলিকেও।
১৯৯৬-এ এক জোরালো বোমা বিস্ফোরণ কেঁপে উঠেছিল দিল্লির লাজপত নগর সেন্ট্রাল মার্কেট। মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জনের, আহত হয়েছিলেন আরও ৩৮ জন। পাশাপাশি ব্যাপক সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছিল। এই হামলার দায় নিয়েছিল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন, জম্মু ও কাশ্মীর ইসলামিক ফ্রন্ট বা জেকেআইএফ (JKIF)। তদন্তে জানা গিয়েছিল, এই হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল পাকিস্তানে। জেকেআইএফ-এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা, ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই। এক মহিলা-সহ ছয় সন্দেহভাজন জঙ্গির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দিল্লি পুলিশ।
২০১০ সালে দিল্লির এক স্থানীয় আদালত ওই ছয়জনের মধ্যে, মহম্মদ নওশাদ, মহম্মদ আলি ভাট এবং মির্জা নিসার হুসেন-কে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। জাভেদ আহমেদ খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি দুজন, ফারুক আহমেদ খান এবং ফরিদা দারকেও কম মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। শুনানি চলাকালীনই তারা সেই সাজা ভোগ করায়, রায় ঘোষণার সময়ই মুক্তি পেয়েছিল তারা। ২০১২ সালে কারাদণ্ড প্রাপ্ত চার আসামীই তাদের সাজা মকুবের আবেদন করেছিল দিল্লি হাইকোর্। হাইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, দিল্লি পুলিশের তদন্তে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। প্রমাণের অভাব, অভিযুক্তদের সনাক্তকরণে ব্যর্থতা, সাক্ষীদের বক্তব্য নথিভুক্ত না করার মতো ত্রুটির কারণে প্রমাণের প্রকৃতি এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মির্জা নিসার হুসেন এবং মহম্মদ আলি ভাটকে বেকসুর খালাস দিয়েছিল হাইকোর্ট। মহম্মদ নওশাদের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জাভেদ আহমেদ খানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা বহাল ছিল।