ভোপাল: একসময় ভারতের মধ্যপ্রদেশে গিজ গিজ করত দৈত্যাকার ডাইনোসর। এমনটাই বলছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি, নর্মদা উপত্যকার ল্যামেটা ফরমেশনে ভারতে পাওয়া বৃহত্তম ডাইনোসর, টাইটানোসরের অন্তত ৯২টি বাসা আবিষ্কৃত হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে টাইটানোসরের ২৫৬টি ডিমের জীবাশ্ম। এই আবিষ্কারে ভারতীয় উপমহাদেশে টাইটানোসরদের জীবন সম্পর্কে ঘনিষ্ঠ বিবরণ জানা গিয়েছে। টাইটানোসররা ছিল বিশল আকৃতির, লম্বা ঘাড় এবং লম্বা লেজ বিশিষ্ট, চারপেয়ে এবং তৃণভোজী ডাইনোসর। জুরাসিক যুগের (১৬ কোটি ৩৫ লক্ষ থেকে সাড়ে ১৪ কোটি বছর আগে) শেষ ভাগ থেকে ক্রিটেসিয়াস যুগের (সাড়ো ১৪ কোটি থেকে ৬কোটি ৬০ লক্ষ বছর আগে) শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রাণী ছিল এই টাইটানোসর। অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সমস্ত মহাদেশেই এই ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত এর ৪০টি প্রজাতি সনাক্ত করা গিয়েছে।
মধ্য ভারতের ল্যামেটা ফর্মেশন এলাকায় আগেও ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষভাগের একাধিক ডাইনোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। সাম্প্রতিক আবিষ্কারে প্রায় ছয়টি ভিন্ন প্রজাতির ডাইনোসরের ডিম চিহ্নিত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আধুনিক যুগের কুমিররা যেমন অগভীর গর্তে তাদের ডিম পুঁতে রাখে, টাইটানোসররাও তাই করেছিল। এমনকি, টাইটানোসরের একটি ডিমের মধ্যে আরেকটি ডিম থাকার মতো একটি বিরল আবিষ্কারও হয়েছে। ডিমগুলি বালিময় চুনাপাথর এবং চুনযুক্ত বেলেপাথরের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। গবেষকরা ধার জেলার জামনিয়াপুরা এবং পদ্লিয়া অঞ্চলে ফেরুজিনাস বেলেপাথর পেয়েছেন। যা থেকে বোঝা গিয়েছে, টাইটানোসররা জলাশয় এলাকাতেই বসা বেঁধেছিল। একই এলাকায় বেশ কয়েকটি বাসা পাওয়া গিয়েছে। এর থেকে বিজ্ঞানীদের অনুমান, আধুনিক পাখিদের মতো উপনিবেশ গড়ে থাকত এই ডাইনোসরগুলি।
এই আবিষ্কারগুলি, গবেষকদের টাইটানোসরের প্যালিওবায়োলজি সম্পর্কে বুঝতে আরও সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গবেষকরা কিছু না ফোটা ডিমও খুঁজে পেয়েছেন। বন্ধ্যাত্ব, ডিম ফোটার আগে ভ্রূণের মৃত্যু, ডিমগুলি মাটির অনেক গভীরে রাখা, বন্যার মতো পরিবেশগত কারণ বা হ্রদ ও পুকুরের কাছে ডিম পাড়ার কারণেই ওই না ফোটা ডিমগুলি পাওয়া গিয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা। এর থেকে সেই সময়ের ডাইনোসরদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অনেক তথ্য মিলেছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, ছোট হ্রদ বা পুকুরের নরম জলাবদ্ধ পলিতে যে ডিমগুলি পাড়া হয়েছিল, সেগুলি মাঝে মাঝে ডুবে যেত। তাই সেগুলি অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছে। তবে, ধার জেলার আখাড়া ও ধোলিয়া রায়পুরিয়া অঞ্চলে যে ডিমগুলি পাড়া হয়েছিল, সেগুলির বেশির ভাগই ফুটে জন্ম নিয়েছিল শিশু টাইটানোসর।