
নয়া দিল্লি: সোমে রাজঘাটে অবস্থান। আর মঙ্গলে প্রথমে যন্তর মন্তরে ধরনা। তারপর কৃষিভবন অভিযান। তুলকালাম কাণ্ড। বাংলার ‘বঞ্চিতদের’ চিঠির বোঝা নিয়ে কৃষিভবনে ঢুকলেন অভিষেক। ঠায় অপেক্ষা করলেন। পুলিশ এল। কাতারে কাতারে পুলিশ ফোর্স। আটক হলেন। গত ৪৮ ঘণ্টায় দিল্লির রাজনীতি অনেক কিছুর সাক্ষী থাকল। আর একইসঙ্গে যেন জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় আরও পরিপক্ক করে তুলল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে। তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তাঁদের নেত্রী, আর অভিষেক তাঁদের সেনাপতি। মমতার তথা গোটা দলের যোগ্য সেনাপতি হিসেবে আজ নিজের পদচিহ্ন আরও স্পষ্ট করলেন অভিষেক। অন্তত এমনই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।
একশো দিনের কাজের টাকা আদায়ের লক্ষ্যে তৃণমূলের এই দিল্লিযাত্রায় দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়েরও থাকার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি থাকতে পারেননি দিল্লিতে। ফলে মমতার অনুপস্থিতিতে তৃণমূলের এই ‘মিশন দিল্লির’ নেতৃত্বের ভার পড়ে অভিষেকের কাঁধেই। অভিষেক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দলের অঘোষিত সেকেন্ড ম্যান। সেই জায়গায় নেত্রীর অনুপস্থিতিতে তিনি কীভাবে গোটা বিষয়টির রণকৌশল তৈরি করেন, কীভাবে নেতৃত্ব দেন, সেদিকে নজর ছিল সকলের। অভিষেকের হাত ধরে ‘মিশন দিল্লি’ কেমন হল, কতটা সাফল্য পেল, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলতে থাকবে। তবে তৃণমূল শিবির মনে করছে, অভিষেকের সেনাপতিত্বে দিল্লি অভিযানে বিজেপিকে বেশ বড়সড় ঝটকা দিতে পেরেছে তারা। রাজঘাট থেকে শুরু করে কৃষিভবন, গোটা কর্মসূচিতে দলের সাংসদ-বিধায়কদের একেবারে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অভিষেক।
অতীতে একটা সময়ে কানাঘুষো শোনা যেত, ফিরহাদ হাকিম বা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা দলের সেনাপতির খুব একটা ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে ছিলেন না। তবে আজকের ছবি কিন্তু যাবতীয় সমালোচনায় ইতি টেনে দিল। ফিরহাদ, কল্যাণ সবাই আজ অভিষেকের পাশে। বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে সবাই এককাট্টা অভিষেকের সেনাপতিত্বে। টার্গেট ছিল, একশো দিনের কাজের টাকা আর আবাস যোজনার ইস্য়ুতে কেন্দ্রের উপর আরও চাপ বাড়ানো। আর ৪৮ ঘণ্টা বাদে যা দেখা গেল, ঘাসফুল সুপ্রিমোর অনুপস্থিতি দলের সেনাপতি হিসেবে নিজের নেতৃত্বদানের ক্ষমতাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তৃণমূলের সেকেন্ড ম্যান অভিষেক।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সশরীরে থাকতে পারেননি দিল্লি অভিযানে। কিন্তু দিল্লিতে প্রতি মুহূর্তের হালচালের আপডেট নিয়েছেন তিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে গত ২ দিনে কিছু লেখেননি। মঙ্গলবার সন্ধেয় কৃষিভবন অভিযান ঘিরে যা হল, যেভাবে অভিষেকদের আটক করা হল, বাসে তুলে সবাইকে পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হল, তাতে নীরবতা ভেঙেছেন মমতাও। সোমবার রাজঘাট, আর মঙ্গলে কৃষি ভবন… গত ৪৮ ঘণ্টার সব ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। দিল্লি পুলিশ যেভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আর পাঁচটা সাধারণ অপরাধীদের মতো জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে, তাতে বেজায় অসন্তুষ্ট তৃণমূল সুপ্রিমো। এক্স হ্যান্ডেলে লম্বা-চওড়া পোস্টের শেষে তৃণমূল সুপ্রিমো লিখেছেন, “কিন্তু আমরা ভয় করব না ভয় করব না, দু’বেলা মরার আগে মরব না, ভাই, মরব না।”
অভিষেকের এই মিশন দিল্লি শেষ পর্যন্ত কী হবে, তা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চর্চা চলেছে। মঙ্গলবার আবার ইডির তলব ছিল। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করেই মিশন দিল্লি সফল করাটাই যেন চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “কারও ক্ষমতা থাকলে আন্দোলন আটকে দেখাক।” সেই চ্যালেঞ্জটাই যেন গত ৪৮ ঘণ্টায় বার বার বুঝিয়ে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। যুদ্ধজয়ের তৃপ্তি তাঁর এক্স হ্যান্ডেলেও। নিয়েছেন, ‘জমিদারদের’ কাছে মাথা না নোয়ানোর অঙ্গীকার…