TV9 Bangla Explained: নরবলি শুধু কেরলে নয়, প্রতি বছরই ঈশ্বরের নামে বহু হত্যা হয় ভারত জুড়ে

Human Sacrifice in India: কেরলের নব়বলির ঘটনা গোটা দেশকে চমকে দিয়েছে। কিন্তু, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, ভারতে ২০১৪ থেকে এই ধরনের ১০০ টিরও বেশি হত্যা ঘটেছে।

TV9 Bangla Explained: নরবলি শুধু কেরলে নয়, প্রতি বছরই ঈশ্বরের নামে বহু হত্যা হয় ভারত জুড়ে
প্রতীকী ছবি

| Edited By: অমর্ত্য লাহিড়ী

Oct 14, 2022 | 10:25 AM

নয়া দিল্লি: কেরলের নব়বলির ঘটনা চমকে দিয়েছে গোটা দেশকে। পুলিশ জানিয়েছে, এক ওঝার প্রভাবে সম্পদ লাভের আশায়, পাথানামথিট্টা জেলার এলানথুর গ্রামে দুই মহিলাকে বলি দিয়েছে এবং তাদের মাংস ভক্ষণ করেছে এক চিকিত্সক দম্পতি। ওই ওঝা মহম্মদ শফি, এবং চিকিৎসক দম্পতি ভগবাল সিং এবং তাঁর স্ত্রী লায়লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, “কেরলের মতো রাজ্যে এই অপরাধ কল্পনাতীত।” বস্তুত, কেরলের মতো একটি শিক্ষিত রাজ্যে কীভাবে এমন অপরাধ ঘটল, তা সারা দেশেরই প্রশ্ন। তবে, ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি-র প্রকাশিত তথ্য বলছে, এই একুশ শতকেও গোটা ভারত জুড়েই নব়বলি এবং কালোজাদু সংক্রান্ত হত্যার ঘটনা প্রচলিত রয়েছে।

নরবলির পরিসংখ্যান

২০২১ সালে ভারতে মোট পাঁচটি নব়বলির ঘটনা ঘটেছিল। আরও ৬৮টি মৃত্যুর পিছনে কারণ ছিল কালোজাদু। উল্লেখযোগ্য, ২০২১-এও কিন্তু, ‘শিক্ষিত রাজ্য’ কেরলে দুটি নরবলির ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ এবং তেলঙ্গানা থেকে একটি করে নরবলির ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। জাদুবিদ্যার সাথে জড়িত খুনের ক্ষেত্রে সবথেকে এগিয়ে ছিল ছত্তীসগঢ়। সেখানে ২০টি এমন হত্যা হয়েছিল। এছাড়া মধ্যপ্রদেশে ১৮টি, তেলঙ্গানা ১১টি, অন্ধ্র প্রদেশে ৬টি, বিহারে ৪টি, ঝাড়খণ্ডে ৩টি, গুজরাট এবং ওড়িশায় ২টি করে এবং রাজস্থান ও উত্তর প্রদেশে ১টি করে কালোজাদু সংক্রান্ত হত্যা হয়েছিল।

এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালেও, ১১টি নরবলি ঘটেছিল ভারত জুড়ে। ৮৮টি হত্যার ক্ষেত্রে কারণ ছিল জাদুবিদ্যা। তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে, নরবলি সংক্রান্ত হত্যার ঘটনার ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছিল। ওই বছর ভারতে এরকম ১৯টি হত্যা হয়েছিল। এর মধ্যে কর্ণাটক, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে ৫টি করে মরবলি ঘটেছিল। এছাড়া ঝাড়খণ্ড ২টি এবং অসম ও উত্তর প্রদেশ ১টি করে নরবলির ঘটনা রিপোর্ট করেছিল। ২০১৪ সাল থেকে ধরলে, ভারতে ১০০টিরও বেশি নরবলির ঘটনা ঘটেছে।

কেরলই একমাত্র নয়

চলতি মাসের শুরুতেও কিন্তু, দক্ষিণ দিল্লির লোধি কলোনিতে এক ছয় বছরের কিশোরকে বলি দেওয়ার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল দুই ব্যক্তিকে। পুলিশকে তারা জানিয়েছিল, গাঁজা সেবন করে তারা “ভগবান শিবের দর্শন পেয়েছিলেন”। ধনলাভের জন্য তিনি না কি “এক বালকের বলি দিতে” বলেছিলেন। ২০২০ সালের মে মাসে ওডিশার কটক জেলার একটি মন্দিরে ৫২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছিলেন এক পুরোহিত। তার দাবি ছিল সে স্বপ্নাদশ পেয়েছিল, কোভিড-১৯ মহামারির সমাপ্তি ঘটাতে, তাকে নরবলি দিতে হবে। ওই বছরের জানুয়ারিতে, ওড়িশাতেই মা কালিকে তুষ্ট করতে এক ব্যক্তি তার ১২ বছরের কিশোরী বোনকে হত্যা করেছিল। ২০১৭ সালে কর্ণাটকের আরেকটি নব়বলির ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। এক ১০ বছরের নাবালিকাকে বলি দেওয়া হয়েছিল তার কাকার প্যারালাইসিস রোগ নিরাময়ের জন্য। এরকম ঘটনার কথা বলে শেষ করা যাবে না।

কেন ঘটে এই ধরনের ঘটনা?

কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তিদের মতে, ভারতে নব়বলিদানের অনুশীলন মূলত তন্ত্রবাদের সঙ্গে জড়িত। এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেছিল মধ্যযুগে। অষ্টম শতকে ভারতে তান্ত্রিক সম্প্রদায়টি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বহু তান্ত্রিক আচারের সঙ্গেই রক্ত ​​অর্ঘ দেওয়া, নব়বলি এবং নরমাংস ভক্ষণের মতো ভয়ানক বিষয় জড়িত ছিল। বর্তমান ভারতে নরবলি, কুসংস্কারের মতো একটি বৃহত্তর সমস্যার অংশ। স্বঘোষিত ধর্মগুরু বা ওঝারা ধনলাভ থেকে শুরু করে রোগ নিরাময় করা বা দেবতাদের অনুগ্রহ লাভের আশা দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে নব়বলিদানে রাজি করায়।

আসল, ভারত দ্রুত উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হলেও, এখনও ধর্মীয় বিশ্বাসই দেশের সামাজিক কাঠামোর সবথেকে বড় অংশ। আর এই বিশ্বাসে ভরা মনকেই কাজে লাগায় হাজার হাজার তান্ত্রিক, ওঝা এবং স্বঘোষিত ধর্মগুরুরা। দেশের প্রতিটি শহর ও গ্রামে তাদের ব্যবসা চলে। এই ব্যক্তিরা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে নিজেদের দাবি করে। জাদুবিদ্যার মাধ্যমে অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর প্রতিশ্রতি দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে। আর অর্থনীতির চাপে ক্লিষ্ট মানুষও সহজে ঐশ্বরিক আশীর্বাদের আশায় সেই ফাঁদে পা দেয়।