
কিয়েভ: টাইম ম্যাগাজিনের ২০২২ সালের ‘সেরা ব্যক্তিত্ব’ (Time Magazine’s ‘Person Of The Year’for 2022) হিসাবে মনোনীত করা হল ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Ukraine President Volodymyr Zelensky) এবং “ইউক্রেনের চেতনা”কে। এএফপি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুশ আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেন এবং সেই দেশের প্রেসিডেন্ট যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, সেই কারণেই জেলেনস্কি এবং ইউক্রেনের চেতনাকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হল। টাইম ম্যাগাজিনের এডিটর-ইন-চিফ এডওয়ার্ড ফেলসেন্থল বলেছে, “জেলেনস্কি এমনভাবে গোটা বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছেন, তা আমরা গত কয়েক দশক ধরে দেখিনি।” রুশ আক্রমণের মধ্যেও জেলেনস্কির কিয়েভে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে টাইম ম্যাগাজিন “নিয়তি নির্ধারক” বলে অভিহিত করেছে। ফেলসেন্থল বলেন, “গত কয়েক বছরের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি ছিল সবথেকে স্পষ্ট।”
বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে ফেনসেন্থল লিখেছেন, “২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রুশ বোমা পড়া শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, কিয়েভ থেকে না পালিয়ে সেখানে থেকে যাওয়ার এবং প্রতিরোধ বাহিনীকে যাবতীয় সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জেবলেনস্কি। এই সিদ্ধান্তটি ছিল নিয়তি নির্ধারক। ২৫ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রথম ৪০ সেকেন্ডের ইনস্টাগ্রাম পোস্ট করেছিলেন। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, তাঁর মন্ত্রিসভা এবং সুশীল সমাজ অক্ষত রয়েছে। তারপর পার্লামেন্ট, বিশ্বব্যাঙ্ক গ্র্যামি পুরস্কারের মঞ্চে তার দেওয়া বক্তৃতাগুলি – সর্বত্রই ছিলেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি। তার তথ্য আক্রমণ ভূ-রাজনৈতিক আবহাওয়া বদলে দিয়েছে। ধারাবাহিক পদক্ষেপের একটি তরঙ্গ স্থাপন করেছে, যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।”
সম্প্রতি জেলেনস্কি স্লোভিয়ানস্কে ভ্রমণ করেছেন। এই শহরটি বাখমুট শহরের একেবারে কাছে, পূর্ব ডোনেটস্কের অংশ। গত সেপ্টেম্বরে রাশিয়া এই অঞ্চলটিকে রুশ মানচিত্রে সংযুক্ত করেছে। এই এলাকাটি তাদের বলে দাবি করেছে মস্কো। টাইম ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের প্রোফাইলে বলা হয়েছে, যুদ্ধকালীন নেতা হিসাবে জেলেনস্কির সাফল্য দেখিয়েছে যে সাহস অত্যন্ত সংক্রামক বিষয়। জেলেনস্কির উপস্থিতি ইউক্রেনের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে উৎসাহ জুগিয়েছে। জেলেনস্কির সঙ্গে প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির পার্থক্যও তুলে ধরা হয়েছে। ২০২১ সালের অগস্টে তালিবান যোদ্ধারা আফগানিস্তান দখল করার সময় পালিয়ে গিয়েছিলেন ঘানি।
পূর্বসূরি ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে জেলেনস্কির। ইয়ানুকোভিচের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর তিনি কিয়েভ থেকে পালিয়ে মস্কোয় আশ্রয় নিয়েছিলেন। জার্মানদের হাত থেকে বাঁচতে আলবেনিয়া, বেলজিয়াম, চেকোস্লোভাকিয়া, গ্রীস, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে এবং যুগোস্লাভিয়ার নেতারাও তাদের নিজ নিজ দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেছে টাইম ম্যাগাজিন। টাইম ম্যাগাজিন আরও বলেছে, জেলেনস্কি জানতেন তাঁর কোনও সামরিক দক্ষতা নেই। তাই, তিনি যুদ্ধ পরিচালনার ভার তাঁর জেনারেলদের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু, দেশের নেতা হিসেবে তিনি গোটা বিশ্বকে বুঝিয়েছেন, বৈশ্বির স্বার্থেই এই যুদ্ধে ইউক্রেনের জয় প্রয়োজন।