নয়া দিল্লি: আমেরিকার স্বভাবসিদ্ধ ‘দাদাগিরি’-তে কোনও বদলই আসছে না। বরং যতদিন যাচ্ছে তত বেশি একরোখা হয়ে উঠছে আমেরিকা। দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকা ভেবে আসছে, বিশ্বের ক্ষেত্রে তারা অপরিহার্য। যে কোনও ইস্যুতে অন্যান্য দেশগুলিকে তাদের চিন্তাধারার সঙ্গে একমত হতেই হবে, নইলে জুটবে ভর্ৎসনা, কূটনৈতিক আগ্রাসন বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। ভারতের ক্ষেত্রে অনেকটা একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। সোমবার ভারত নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন (Joe Biden)। তিনি জানিয়েছেন, বন্ধু দেশ হিসেবে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের বিষয়ে ভারতের থেকে তাদের যে প্রত্যাশা ছিল, সেই তুলনায় ভারতের অবস্থান অনেকেটাই ‘নড়বড়ে’।
সোমবার মার্কিন শিল্পপতিদের এক সম্মলেন আমেরিকা নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর সদস্য দেশে গুলির প্রশংসা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারত, আমেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া কোয়াডের সদস্য। রাশিয়া নিয়ে জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার নীতির অবস্থান করলেও ভারতে অবস্থান নিয়ে নেতিবাচক কথা শোনা যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের গলায়। তিনি বলেন, “জাপান ও অস্ট্রেলিয়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিলেও ভারতের অবস্থান নড়বড়ে।” রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল ভারত। সেখান থেকে ভারতের প্রতি বিরূপ মনোভাব শুরু আমেরিকার। সম্প্রতি মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়ার থেকে কাঁচা তেল কেনা বন্ধ করেনি ভারত। এই অবস্থানে বেজায় চটেছে ওয়াশিংটন। ভারতের যুক্তি দেশের তেলের চাহিদার একটা বড় অংশ ভারতকে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে রাশিয়া ভারতকে অনেক কম দামে তেল দিচ্ছে পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে নয়া দিল্লির সখ্যতা অনেক পুরানো, তাই তেল কেনার মধ্য কোনও অন্যায় নেই।
আমেরিকার মতো অন্যান্য দেশের মধ্যে চলা সমস্যায় ভারতের নাক গলানোর কোনও রেকর্ড নেই। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে প্রথম থেকেই ভারত জানিয়েছিল তারা ‘হিংসা বন্ধ করে আলোচনার পক্ষে।’ এমনকী দুই দেশের সংঘাত নিয়ে একাধিকবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গেও কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরও একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ভারত শান্তিপ্রিয় দেশ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে শান্তির পক্ষে নেওয়া ভারতের অবস্থান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাই তো চিন, পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশি দেশে বারবার প্ররোচনা দেওয়ার পরেও শান্তির পক্ষে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছে ভারত। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও ভারতের বিদেশ নীতির প্রশংসা করেছেন এবং জানিয়েছেন দেশের জনগণের স্বার্থের কথা ভেবেই ভারত বিদেশ নীতি তৈরি করে। তাই কোনওভাবে মার্কিন এই অভিযোগের বাস্তবিক ভিত্তি নেই বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।