
লখনউ: ৩৬ বছর ধরে এক মহিলা একটি ঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন তাঁর বাবা। অভিযোগ ওই মহিলা মানসিকভাবে অসুস্থ। স্বপ্না জৈন নামে ৫৩ বছর বয়সী ওই হতভাগ্য মহিলার সম্পর্কে এক স্থানীয় এনজিও পুলিশকে জানানোর পর, সম্প্রতি তাঁকে উদ্ধার করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে ফিরোজাবাদের টুন্ডলা এলাকার মহম্মদাবাদ গ্রামে।
জানা গিয়েছে, মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নাবালিকা অবস্থায় স্বপ্নাকে ওই ঘরে বন্দী করা হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। তাই সেই সময় থেকে তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হত। গত ৩৬ বথছর ধরে তাজা বাতাস, সূর্যের আলো – কিছুরই স্পর্শ পায়নি সে। বন্ধ দরজার নিচ দিয়ে খাবারের থালা ঠেলে দেওয়া হত তাঁর ঘরে। আর ঘরটির জানালা দিয়ে পরিবারের লোকজন স্বপ্নার দিকে জল ছুড়ে ছুড়ে দিয়ে তাঁকে স্নান করাতো।
এভাবেই চলছিল। কিন্তু, সম্প্রতি স্বপ্নার বাবার মৃত্যু হয়। তাতেই বদলে যায় পরিস্থিতি। স্বপ্নার খবর পেয়ে ‘সেবাভারতী’ নামে স্থানীয় এক এনজিওর সদস্যরা তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন। তারা গিয়ে দেখেছিলেন ভয়াবহ অবস্থায় হাস করছেন স্বপ্না। গোটা ঘর নোংরায় ভর্তি। স্বপ্নার গায়েও ময়লা ভর্তি। ‘সেবাভারতী’র সদস্যরা প্রথমেই স্বপ্নাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তাঁকে নতুন পোশাক পরায়। তারপর তারা খবর দিয়েছিল আগ্রার প্রাক্তন মেয়র তথা হাথরসের বিজেপি বিধায়ক অঞ্জুলা মাহাউরকে।
অঞ্জুলা মাহাউর পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন। অবশেষে চলতি সপ্তাহে স্বপ্নাকে বন্দিদশা থেরে মুক্ত করে স্থানীয় পুলিশ। বিজেপি বিধায়ক স্বপ্নার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেন। তাঁর কথাতেই স্বপ্নাকে আগ্রার এক মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যেতে রাজি হয় তাঁর পরিবার। সূত্রের খবর, সেখানকার চিকিৎসকরা স্বপ্নাকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, চিকিৎসা হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন স্বপ্না।
তাহলে এতদিন তাঁর কোনও চিকিৎসা করানো হয়নি কেন? এই বিষয়ে স্বপ্নার পরিবার মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তবে পাড়া প্রতিবেশীদের দাবি, স্বপ্নার বন্দিদশার কথা সকলেই জানতেন। তাঁরা অনেকবার স্বপ্নার বাবা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। স্বপ্নাকে ডাক্তার দেখানো জন্য বারবার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, তাঁর পরিবার রাজি হয়নি। বরং, এটা তাদের ‘পারিবারিক বিষয়’ বলে দাবি করে, স্বপ্নার থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল।