
জোশীমঠ: ভাঙনের মুখে দেবভূমি। যেকোনও মুহূর্তেই তলিয়ে যেতে পারে গোটা জোশীমঠ(Joshimath)। ক্রমশ ফাটল ধরছে জোশীমঠের বাড়ি-হোটেলগুলিতে। ফাটল দেখা যাচ্ছে রাস্তাঘাটেও। দ্রুত ধসে যাচ্ছে মাটি (Land Sinking)। অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র জোশীমঠের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে জোশীমঠকে বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের। দেওয়া হচ্ছে দেড় লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণও। এত কিছুর মাঝেও ক্ষোভ রয়েই গিয়েছে জোশীমঠের বাসিন্দাদের। তাদের অভিযোগ, জোশীমঠের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী পাহাড় কেটে অবাধ নির্মাণকাজ। বিশেষ করে সরকারের অধীনে এনটিপিসি(NTPC) তপোবনে যে হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পের কাজ চলছে, তার জন্যই জোশীমঠে ফাটল ধরেছে। সাধারণ মানুষের এই অভিযোগ শুনেই এবার জোশীমঠের ভাঙনে এনটিপিসি-র ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবে উত্তরাখণ্ড সরকার।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, তপোবনের হাইড্রো-পাওয়ার প্রকল্পের জন্য এনটিপিসি পাহাড় কেটে মাটির নীচে যে সুড়ঙ্গ তৈরি করছে, তার জেরেই মাটিতে ধস নেমেছে। আগেও একাধিকবার জোশীমঠের ভূমিধস নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও এনটিপিসি কাজ থামায়নি। সূত্রের খবর, স্থানীয় বাসিন্দাদের এই অভিযোগের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকারের তরফে এনটিপিসির কাজের ধরন নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠান মিলে জোশীমঠের ভূমিধসের কারণ নিয়ে তদন্ত করবে।
বিগত কয়েক সপ্তাহে অত্যন্ত খারাপ অবস্থা হয়েছে জোশীমঠের। বাড়ি, হোটেল, প্রতিরক্ষা দফতরের বিল্ডিং থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, সমস্ত জায়গাতেই ফাটল ধরেছে। প্রতি ঘণ্টায় মাটি কিছুটা করে ধসে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গতকালই ইসরোর তরফে প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রেও দেখা গিয়েছে বিগত ১২ দিনে জোশীমঠে ৫.৪ সেন্টিমিটার মাটি বসে গিয়েছে। ইসরোর রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে গত ৮ জানুয়ারির মধ্যে জোশীমঠের মাটি ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গিয়েছে। একাধিক কারণে জোশীমঠের মাটি বসে যাচ্ছে। সেনা হেলিপ্যাড ও মন্দিরের আশেপাশে ব্যাপকভাবে ভূমিধস হচ্ছে।
বিনা পরিকল্পনায় লাগাতার নির্মাণকাজ, পাহাড় খোদাইয়ের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, জোশীমঠে ভাঙন ধরার পরই ওই জেলায় সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রয়েছে এনটিপিসির সুড়ঙ্গ খোদাইয়ের কাজও। এবার সরকারের তরফে জোশীমঠের এই ভাঙনে এনটিপিসি-র কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, অতীতেও পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে ভূতত্ত্ববিদ, সকলেই পাহাড়ে ডিনামাইট বিস্ফোরণ করিয়ে ফাটল ধরানো এবং টানেল বোরিং মেশিনের ব্যবহারের কারণে যেকোনও মুহূর্তে ধস নামার সম্ভাবনা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল।