আহমেদাবাদ: আট বছরের বিবাহিত জীবনে অনুপস্থিত ছিল যৌনতা। বউ চাইলেও বর বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যেতেন। অবশেষে বউ জানতে পারলেন যার সঙ্গে এতদিন ধরে ঘর করছিলেন, তিনি আসলে পুরুষই নন। শারীরিকভাবে তিনি ছিলেন মহিলা। পরে, বউকে কিচ্ছু না জানিয়ে কলকাতায় গিয়ে গোপনে লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচার করেছিলেন। এই বিষয়ে গুজরাটের ভদোদরা শহরের গোত্রী থানায় তিনি একটি এফআইআর দায়ের করেছেন। স্বামী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের পাশাপাশি তিনি দাবি করেছেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের ওই অস্ত্রোপচারের পর থেকে তাঁর স্বামী তাঁকে “অপ্রাকৃতিক যৌনতায়” বাধ্য করেন।
অভিযোগকারী মহিলার বাড়ি ভদোদরাতেই। ২০১১ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর প্রথম স্বামীর। তারপর থেকে ১৪ বছরের মেয়েকে নিয়ে একাই থাকতেন তিনি। এরপর, ২০১৩ সালে এক বৈবাহিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দিল্লির বাসিন্দা ডাক্তার বিরাজ বর্ধনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়েছিল। ভদোদরা পুলিশ জানিয়েছে, দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটা করে বিয়ে হয়েছিল তাঁদের। এমনকি, কাশ্মীরে মধুচন্দ্রিমা করতেও গিয়েছিলেন তাঁরা। তবে, মধুচন্দ্রিমাতে গিয়েও স্ত্রী সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেননি তিনি। নানা অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন।
ফিরে আসার পরও এই অবস্থা চলতে থাকে। একসময় স্ত্রী তাঁকে শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ দেন। ডাক্তার বিরাজ বর্ধন সেই সময় দাবি করেছিলেন, কয়েক বছর আগে তাঁর একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই সময় তিনি রাশিয়ায় থাকতেন। সেই দুর্ঘটনার ফলে তিনি যৌন ক্ষমতা হারিয়েছেন। স্ত্রীকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন।
এরপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে, বিরাজ স্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি স্থূলতা কমানোর জন্য ব্যারিয়াট্রিক সার্জারি করাতে চান। তার জন্য তাঁকে কলকাতায় যেতে হবে। স্ত্রীকে বিশদে কিছু না জানিয়েই দিল্লি থেকে পাড়ি দিয়েছিলেন কলকাতায়। তবে, অস্ত্রোপচার করে দিল্লি ফেরার পরই তিনি স্ত্রী সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ। মহিলার অভিযোগ, কলকাতায় গিয়ে স্থূলতা কমানোর অস্ত্রোপচার করাননি তাঁর স্বামী, বরং তিনি লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। কারণ, বিরাজ কলকাতা থেকে দিল্লি ফেরার পরই আচমকা তাঁর যৌনতার ক্ষমতা ফিরে এসেছিল। সেই সময় থেকেই স্ত্রীকে তিনি অস্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ। এমনকি ওই মহিলা দাবি করেছেন, এই বিষয়ে মুখ বন্ধ রাখার জন্য তাঁকে হুমকিও দিয়েছিলেন বিরাজ।
মহিলার আরও দাবি, যাঁকে তিনি স্বামী বলে মনে করতেন, লিঙ্গ পরিবর্তনের অস্ত্রোপচারের আগে তিনি আসলে শারীরিকভাবে মহিলা ছিলেন। এমনকী, তাঁর আগের নাম বিজয়ীতা বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর আরও অভিযোগ, বিরাজ বা বিজয়ীতার বাড়ির লোকজন সবটাই জানতেন। তিনি কোন অস্ত্রোপচারের জন্য কলকাতায় যাচ্ছেন, তাও তাঁরা জানতেন। কিন্তু, তাঁর কাছ থেকে সব তথ্য গোপন রেখেছিলেন তাঁরা।
এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ ইন্সপেক্টর এম কে গুর্জর জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত বিরাজ বা বিজয়ীতাকে দিল্লি থেকে ভদোদরায় আনা হয়েছে। তাঁকে আটক করা হয়েছে। এই ঘটনার বিষয়ে আরও তদন্ত করা হচ্ছে।