Explained: শিমলা চুক্তি স্থগিত করে কতটা ভুল করল পাকিস্তান?
Explained: সকল প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রথমেই বুঝতে শিমলা চুক্তি আসলে কী? এই চুক্তি কিন্তু পাকিস্তানে 'অপমানের' ইতিহাসকে বয়ে বেড়াচ্ছে। সাল ১৯৭১। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েছে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানের বাহিনীকে বন্দুক ছাড়া করেছে তারা। জন্ম হয়েছে নতুন একটি দেশ বাংলাদেশের।

কলকাতা: ভারতের ‘জল-যুদ্ধের’ পাল্টা পাকিস্তানে ‘শান্তিভঙ্গ’। মঙ্গলবার নতুন করে ছন্দ কাটল জম্মু-কাশ্মীরের। পহেলগাঁওয়ের বৈসরনে সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রাণ গিয়েছে প্রায় ২৫ জন পর্যটক ও ১ জন কাশ্মীরি সহিসের। সেই ঘটনার পর থেকে পারদ চড়েছে দুই দেশের মধ্যে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্তে সন্ত্রাস ছড়ানোর অভিযোগ তুলে দশক পুরনো সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে ভারত। ‘জল কষ্টের’ আশঙ্কায় ভুগতে শুরু করে পাকিস্তান। আর তখনই বেরিয়ে আসে তাদের ভারত-বিরোধীরূপটা। ভারতের জলের পাল্টা শান্তিভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে পাকিস্তান।
বৃহস্পতিবার পাকিস্তানে পহেলগাঁও হামলা প্রসঙ্গে বৈঠকে বসেছিল জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি। উপস্থিত ছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সেই বৈঠকের পরেই পাকিস্তান ঘোষণা করে বছর পুরনো শিমলা চুক্তি স্থগিত করে দেয়। কিন্তু এই চুক্তিটাই বা কীসের? এর মাধ্যমে কীভাবেই বা শান্তিভঙ্গের চেষ্টা চালাতে পারে পাকিস্তান? সত্যিই কি বিপদে পড়তে পারে ভারত?
সকল প্রশ্নের উত্তরের জন্য প্রথমেই বুঝতে শিমলা চুক্তি আসলে কী? এই চুক্তি কিন্তু পাকিস্তানে ‘অপমানের’ ইতিহাসকে বয়ে বেড়াচ্ছে। সাল ১৯৭১। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধে নেমে পড়েছে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তানের বাহিনীকে বন্দুক ছাড়া করেছে তারা। জন্ম হয়েছে নতুন একটি দেশ বাংলাদেশের। তারপরই ১৯৭২ সালের ২ জুলাই স্বাক্ষর হয়েছে এই শিমলা চুক্তি। যার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে তৈরি হয়েছে নিয়ন্ত্রণ রেখাও।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অংশগ্রহণ পাকিস্তানের মনকে প্রথম থেকে বিষিয়ে দিয়েছিল। তারপর আবার ওত বড় হার। যার জেরে মুখ গোমড়া করে ভারতের সামনে আত্মসমর্পণ করতে হয় পাকিস্তানের ৯৩ হাজার জওয়ান থেকে আধিকারিককে। এরপর দুই দেশের মতো সংঘাত আরও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। আবহাওয়া আরও দূষিত হবে, এটা স্বাভাবিক। সেই আবহের ফলাফল ফুটে ওঠার আগেই তা রুখে দিতে স্বাক্ষর হয় শিমলা চুক্তি।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর উপস্থিতিতে স্বাক্ষর হয় শিমলা চুক্তি। যার উদ্দেশ্যে ছিল, দুই দেশের মধ্যে সংঘাতকে একেবারের মতো শেষ করে, বন্ধুত্ব-সম্প্রীতির সম্পর্ক তৈরি ও সীমান্তে শান্তি বজায় রাখা। এই চুক্তির মাধ্য়মেই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ রেখা তৈরি হয়। এমনকি, এই চুক্তি অনুযায়ী সীমান্তের কিনারায় কোনও সেনা রাখবে না দুই দেশ। এবার গত বৃহস্পতিবার দুই দেশের অশান্তির মাঝেই সেই চুক্তি স্থগিত করল পাকিস্তান।
তবে এটা কিন্তু প্রথম নয়। ৭২ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার এই চুক্তির শর্তভঙ্গ করেছে পাকিস্তান। এই চুক্তি স্বাক্ষরের দশক কয়েকের মধ্যেই হয়েছিল। এমনকি, নানা সময়ে সীমান্তে সন্ত্রাসকে উস্কানি দিয়ে এই চুক্তি ভঙ্গ করেছে তারা। অবশ্য, এই সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার প্রসঙ্গকে কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছে না পাকিস্তানের বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী। দিনকতক আগেই এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, গত তিন দশক ধরে পাকিস্তান সন্ত্রাসে মদত জুগিয়েছে।
এই চুক্তি বাতিলের ফলে কী প্রভাব পড়তে পারে? একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ইসলামাবাদ তরফে শিমলা চুক্তি স্থগিতের কথা বলা হলেও, সেই ভিত্তিতে নয়াদিল্লিতে এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি ঘোষণাপত্র এসে পৌঁছয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, আসলে এই চুক্তি স্থগিত করার মাধ্যমে ভারতকেই সর্তক করছে তারা। এই চুক্তি নেই মানে ভারতীয় কাশ্মীর ও পাক অধ্যুষিত কাশ্মীরের মধ্যে কোনও সীমানাও নেই (পাকিস্তানের মতে)। সুতরাং, সুযোগ বুঝে ভারতের পাড়়ে হানা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে তারা।
তবে কি চাপে ভারত? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, পাকিস্তানের ওত ক্ষমতাই নেই। তাদের শুধু মুখে বুলি ছোটে। না আছে ঢাল, না আছে তরোয়াল। ফাঁকা কলসির মতোই বেজে যাচ্ছে তারা। বর্তমানে বিশ্বে সেনা-পুলিশের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। সঙ্গে রয়েছে অত্যাধুনিক বন্দুক-আর্টিলারি। সেখানে দাঁড়িয়ে যতই চুক্তি স্থগিত করুক পাকিস্তান, কিছুই যায় আসবে না ভারতের। এমনকি, কাশ্মীরেও আবার আগের রূপে ফিরে এসেছে সেনা। জঙ্গি দেখলেই দিচ্ছে উড়িয়ে।

