নয়া দিল্লি: এবার একেবারে ভিন্ন ধরনের বাজেট (Budget 2021) পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। স্বাধীনতার পর এই প্রথম ‘পেপারলেস’ বাজেট দেখবে গোটা দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশ করার সময় অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে অর্থমন্ত্রীকে। করোনা আবহে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। এই অচল অর্থনীতিকে সচল করে তোলাই নির্মলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দীর্ঘ লকডাউনে বিস্তর সময়ের জন্য বন্ধ ছিল উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও। ইতিমধ্যেই রাজকোষে বিশাল ঘাটতি। প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকার শূন্যস্থান রাজকোষে। কিন্তু সরকারের কাছে প্রতিকূলতা অনেক। লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে সংঘাতের উত্তেজনা এখনও চরমে। তাই প্রতিরক্ষা খাতে যথেষ্ট ব্যয় করতে হবে কেন্দ্রকে। অন্য দিকে করোনা আবহে স্বাস্থ্য খাতও নজরে রাখতে হবে।
তবে করোনার আগে থেকেই সংকুচিত হতে শুরু করেছিল অর্থনীতি। তাই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতেও বাজেটে চমক আনতে হবে। এমতাবস্থায় বাজেটে নির্মলার সামনে যে যে বিষয়গুলি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, সেগুলি হল…
চাকরি পদ তৈরি : মানুষের হাতে টাকা নেই। আর বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী, অর্থনীতি তখনই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, যদি মানুষের হাতে টাকা আসে। তাই সরকারকে অধিক চাকরির সুযোগ গড়ে তুলতে হবে। যার মাধ্যমে মানুষের হাতে টাকা আসবে। ২০১১-১২-র এনএসএস রিপোর্ট অনুযায়ী, মোট চাকুররিজীবীদের ১৮ শতাংশ ছিলেন বেতনভুক কর্মচারী। ৩০ শতাংশ চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক ও ৫২ শতাংশ স্ব-নির্ভর। কিন্তু ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের রিপোর্ট অনুযায়ী, বেতনভুক কর্মচারী ২৪ শতাংশ হলেও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কমে হয়েছে ২৪ শতাংশ।
নিম্নমুখী বিনিয়োগ: ভারতের জিডিপির ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ নির্ভর করে বিনিয়োগের উপর। কিন্তু বিগত ২০ বছরের সব থেকে কম বিনিয়োগ এসেছে এই অর্থবর্ষে। ২০০১-০২ সালে ভারতের জিডিপির মোট ৩০ শতাংশের উৎস ছিল বিনিয়োগ, ২০০৩-০৪ অর্থবর্ষে তা কমে হয় ২৮ শতাংশ। পরবর্তীকালে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ২০০৭-০৮ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৩৭ শতাংশ। কিন্তু তারপর এই অঙ্ক নিম্নমুখী হয়। যা ২০২০ অর্থবর্ষে ২৪ শতাংশ নেমে গিয়েছে।
বিনিয়োগে সমস্যা: বিনিয়োগকারীদের মতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকার কারণে বিনিয়োগেও ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্ধারিত নিয়মের বিনিয়োগে সমস্যা রয়েছে বলে দাবি বিনিয়োগকারীদের।
অনুৎপাদক ঋণ নিয়ন্ত্রণ: বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত অনুৎপাদক ঋণে রাশ টেনেছে ব্যাঙ্ক। কিন্তু করোনার কারণে ফের অনুৎপাদক ঋণের সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই সংক্রান্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যেই আরবিআই দিয়েছে। সেখানেও অনুৎপাদক ঋণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ: ভারতের অর্থনীতির ৩টি মূল ভিত্তি, খরচ, আমদানি ও রফতানি। করোনার কারণে এই তিন ক্ষেত্রেরই রেখচিত্র নিম্নমুখী। তাই রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রে কূটনৈতিক স্তরে সরকারকে নীতিমালা আনতে হবে। এই তিন বিষয়ের উপর নির্ভর করেই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সরকারকে।