Railways: ট্রেন থেকে আপনার কিছু চুরি হলে দায় কার? স্পষ্ট জানিয়ে দিল হাইকোর্ট

Indian Railways: ২০১৩ সালে নাগপুরগামী ট্রেনে ভ্রমণের সময় ল্যাপটপ, ক্যামেরা, চার্জার, চশমা এবং এটিএম কার্ড সহ একটি ব্যাকপ্যাক চুরি হয়ে যায় শৈলেন্দ্র জৈন নামে এক ব্যক্তির। এরপরেই ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যক্তি।

Railways: ট্রেন থেকে আপনার কিছু চুরি হলে দায় কার? স্পষ্ট জানিয়ে দিল হাইকোর্ট

Apr 11, 2025 | 1:13 PM

রেলে যাত্রাকালীন সময়ে যদি আপনার কোনও জিনিস চুরি হয় তাহলে তার দায় রেল কর্তৃপক্ষ হতে পারে না। যদি না সেই চুরির কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে হয়ে থাকে। একটি মামলার রায় দেওয়ার সময়ট এমনটাই জানিয়েছে দিল্লি হাইকোর্ট।

দিল্লি হাইকোর্টেড় বিচারপতি রবীন্দ্র দুদেজা বলেন, “…একজন যাত্রী, যিনি নিজের লাগেজ নিজে বহন করেন, তার সুরক্ষার জন্য দায়ী তিনি নিজেই। রেলওয়ে চুরির কারণে কোনও ক্ষতির জন্য দায়ী নয়, যদি না রেল কর্মকর্তাদের অবহেলা বা অসৎ আচরণের কারণে চুরির ঘটনা হয়।”

২০১৩ সালে নাগপুরগামী ট্রেনে ভ্রমণের সময় ল্যাপটপ, ক্যামেরা, চার্জার, চশমা এবং এটিএম কার্ড সহ একটি ব্যাকপ্যাক চুরি হয়ে যায় শৈলেন্দ্র জৈন নামে এক ব্যক্তির। এরপরেই ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে মামলা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। দিল্লি হাইকোর্টে সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ওই ব্যক্তির অভিযোগ চুরির ঘটনা কোচ অ্যাটেনডেন্টকে জানালে সেই অ্যাটানডেন্ট তাঁর সঙ্গে অভদ্র আচরণ করেন, অসভ্যে মতো কথা বলেন। এমনকি শেষে টিটির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে চলে যান। আবেদনকারীর দাবি টিটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি আরপিএফ বা জিআরপি কর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

এরপরেই দিল্লি কনজিউমার ফোরামে তিনি একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর ক্ষতির জন্য ৮৪,৪৫০ টাকা , হয়রানির জন্য ১ লক্ষ টাকা এবং মামলার খরচ বাবদ ২০,০০০ টাকা দাবি করেন। জেলা ফোরাম রেলওয়েকে পরিষেবায় ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করে এবং হয়রানির জন্য যাত্রীকে ৫০০০ টাকা ক্ষতিপূরণও দেয়।

এরপর তিনি রাজ্য ফোরামে বর্ধিত ক্ষতিপূরণের জন্য ওই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে পুনরায় আপিল করেন। রেলওয়েকে অবহেলা, হয়রানি ও মানসিক যন্ত্রণা, জিনিসপত্র হারানো এবং মামলার খরচের জন্য ১,০০,০০০ টাকা প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর আবেদনকারী জাতীয় ভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের (এনসিডিআরসি) সামনে একটি পুনর্বিবেচনা আবেদন দাখিল করেন। কিন্তু সেখানে তাঁর অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়। পাশাপাশি রাজ্য ও জেলা ফোরামের আদেশও খারিজ করে দেয় এনসিডিআরসি।

এনসিডিআরসির আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে, ওই যাত্রী হাইকোর্টে বলেন যে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের অবহেলা এবং কর্তব্যে ব্যর্থতা ছিল। কোচ অ্যাটেনডেন্ট সহায়তা প্রদান করতে অস্বীকার করেন। টিটিকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য কোনও আরপিএফ বা জিআরপি কর্মী উপস্থিত ছিলেন না বলেই দাবি করেন তিনি। রেল কর্মকর্তাদের এই ধরনের অসৎ আচরণ এবং অবহেলার কারণেই তাঁর ব্যাকপ্যাকটি নষ্ট হয়েছে বলেও দাবি জানান তিনি।

অন্যদিকে, রেলওয়ের যুক্তি ছিল, মূল্যবান জিনিসপত্র বহনকারী যাত্রীদের তাঁদের জিনিসপত্রের যত্ন নেওয়ার জন্য আরও সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁদের ব্যাগ লোহার রিং দিয়ে তালা দিয়ে আটকে রাখতে হবে। আবেদনকারী তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাই কেবল চুরির অভিযোগের ভিত্তিতে রেলওয়েকে দায়ী করা যায় না।

আদালত উল্লেখ করেছে যে আবেদনকারীর ভোক্তা অভিযোগে দাবিটি মূলত এই সত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল যে পরিচারক ঘুমোচ্ছিলেন এবং অভদ্র আচরণ করেছিলেন। টিটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এতে আরও বলা হয়েছে যে অভিযোগে এমন কোথাও উল্লেখ নেই যে কোচ অ্যাটেনডেন্ট বা টিটির অবহেলার কারণে কোচের দরজা খোলা ছিল অথবা এর কারণেই কোনও অননুমোদিত অনুপ্রবেশকারী কোচে প্রবেশ করে চুরি করেছে।

আদালত বলে, “নিঃসন্দেহে, কর্তব্যের তালিকা অনুসারে, টিটির নিশ্চিত করা উচিত যে কোচের দরজাগুলি তালাবদ্ধ রয়েছে। এমন কোনও উল্লেখ নেই যে কোচের দরজা খোলা ছিল, যার ফলে কোনও অনুপ্রবেশকারী চুরি করার জন্য অননুমোদিতভাবে অনুপ্রবেশ করে থাকতে পারে।”

আদালত আরও বলে, “চুরির ঘটনা, টিটির এবং অ্যাটেনডেন্টের কর্তব্যে অবহেলার মধ্যে একটি যুক্তিসঙ্গত যোগসূত্র থাকা উচিত । কোচে টিটির অনুপস্থিতি কেবল পরিষেবার অভাব হিসাবে গণ্য হতে পারে না, যদি না দরজা বন্ধ রেখে তিনি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেননি বলে কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকে।”

বিচারপতি দুদেজা জানান, বর্তমান মামলায় কোনও অভিযোগ বা প্রমাণ নেই, এমনকি অভিযোগে কোনও অননুমোদিত ব্যক্তি ট্রেনে প্রবেশ করেছে বলেও কোনও দাবি নেই। তিনি বলেন, “রেকর্ডে এমন কিছু ছিল না যা ইঙ্গিত দেয় যে চুরিটি কোনও সহযাত্রীর দ্বারা করা হয়নি। যদি তাই হত, তাহলে ট্রেনে টিটির উপস্থিতিও কোনও কাজে আসত না।”